বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে পরকীয়ার কারণে স্বামী আশিক মিয়াকে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টার দায়ে স্ত্রী মিনা বেগমকে যাবজ্জীবন ও তার প্রেমিকসহ ৩ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে বগুড়ার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হাবিবা মণ্ডল এ রায় দেন।
একই সঙ্গে স্ত্রী মিনা বেগকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ওই ৩ আসামির মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গলায় রশি দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি তিন হলো বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুটিবাড়ির ছফু খাঁর ছেলে ও পরকীয়া করা শিবলু ওরফে ফকির (২৪), রামনগর (তরফদার বাড়ি) গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলাম তরফদারের ছেলে শান্ত মিয়া ওরফে নয়ন ওরফে সিয়াম (২৩) ও আমতলী দক্ষিণপাড়ার তরিকুল মণ্ডলের ছেলে নাইম (২৫)। রায় ঘোষণার পর আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, মৃত আশিক মিয়ার সঙ্গে চার বছর আগে মিনা বেগমের বিয়ে হয়। এ দম্পতির মহিন (৩) নামের একটি ছেলে আছে। এদিকে আসামি ফুফাতো ভাই শিবলুর সঙ্গে মিনা বেগমের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং তার স্বামীর চোখেও পড়ে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ ঘটনার জের ধরে ২০২০ সালের ২ অক্টোবর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামিরা আশিককে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ এবং গোপনাঙ্গে আঘাত করে হত্যা করা হয়। পরে এসিড দিয়ে মুখ পুড়িয়ে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
ঘটনার দুদিন পর ৪ অক্টোবর সারিয়াকান্দি উপজেলার ছাগলধরা গ্রামে বাঙালি নদী থেকে আশিকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন নিহতের ভাই আনিছ উদ্দিন বাদী হয়ে সাজাপ্রাপ্ত চারজনকে আসামি করে সারিয়াকান্দি থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর পরই আসামিদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন। পুলিশ তদন্ত শেষে ওই চারজকে অভিযুক্ত করে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনবছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত রায় ঘোষণা করে। মামলায় আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাড. মন্তেজার রহমান. অ্যাড. আবু বক্কর সিদ্দিক. অ্যাড. বাবলু।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, সমাজের স্বাভাবিক নীতি যারা নষ্ট করে নৈতিক মূল্যবোধ ভাঙ্গতে চায় এ রায় তাদের জন্য দৃষ্টান্ত। রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট।
মন্তব্য করুন