নরসিংদীতে ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চোরাই মালের জমজমাট বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এসব ব্যবসার ওপর কোনো নজরদারি নেই প্রশাসনের।
এসব ভাঙারি ব্যবসার পালিত চোরেরা রাতের আঁধারে গ্যাসের রাইজার, বাসা বাড়ির বৈদ্যুতিক সার্ভিস লাইনের তার, বিভিন্ন বন্ধ ফ্যাক্টরির মালামাল, বাড়ির পানির টিউবওয়েল, টিউবওয়ের মাথা-হাতল, বাড়ির ভাঙা টিন, বাড়ি নির্মাণসামগ্রী ও বাড়ির সামনে থাকা পরিত্যক্ত আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ঘরের গৃহিণীরা ঘরের উঠোনে কিংবা বাড়ির আঙিনায় হাঁড়ি-পাতিল রাখলেও সেগুলোও নিয়ে যাচ্ছে চোর চক্র। সন্ধ্যার পর থেকেই ভাঙারির দোকানগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত এইসব চোরাই মাল কেটে টুকরা টুকরা করে অন্যসব সরঞ্জামের সঙ্গে মিশিয়ে রাখা হয়। ফলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ চোরাই মালামাল বিক্রি হচ্ছে নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলার ভাঙারির দোকানগুলোতে।
জানা যায়, নরসিংদী পৌর শহরের আনাচে কানাচে, অলি-গলিসহ নরসিংদীর ৬টি উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নসহ হাটবাজারগুলোর পাশে গড়ে উঠেছে হাজারো ভাঙারি মালামাল কেনা-বেচার দোকান। এর মধ্যে নরসিংদী শহরের বিলাসদী এলাকায় (আল্লাহু চত্বর) আধা কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে ৩০টিরও বেশি ভাঙারি দোকান। এসব ভাঙারি দোকানিদের সহযোগিতায় এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছে একাধিক ছোট বড় চোরের দল। এই চোরের দলগুলো বিভিন্ন এলাকা থেকে লোহার যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক মোটর, তার, দরজা-জানলার গ্রিল, টিউবওয়েল, টিন, হাঁড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করে দোকানিদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে। এ ছাড়া বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন কারখানা সংস্কার কাজের জন্য রাখা রড, বিভিন্ন বন্ধ ফ্যাক্টরির মালামালসহ লোহা দ্রব্যাদি চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এমনই এক অভিযোগ করেছে শিবপুর উপজেলার গোবিন্দি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ‘ইয়াশা নিটওয়ার লি.’ নামীয় একটি কোম্পানি। এ কোম্পানি থেকে চোর চক্রটি বৈদ্যুতিক তার, বৈদ্যুতিক মোটর, ৩০টি ২০ ফিট লম্বা লোহার পাইপ, জেনারেটর বোর্ড, প্যানেল বোর্ড চুরি করে নিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে কোম্পানির পক্ষ থেকে মো. সাগর মিয়া বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন চোর চক্রের সদস্য জুবায়ের মিয়া, জীবন মিয়া ও জুয়েল মিয়া।
জুবায়ের মিয়া জানান, চুরিকৃত মালামাল জেলার সদরে বিলাসদী আল্লাহু চত্বরে লিটনের ভাঙারি দোকানে নিয়ে মালামাল বিক্রি করে। তারা বিভিন্ন এলাকায় চুরিকৃত মালামাল ভাঙারি দোকানে বিক্রি করে থাকেন। জুবায়ের ও তার দুই সহযোগী জীবন মিয়া ও জুয়ের মিয়া ‘ইয়াশা নিটওয়ার লি.’-এর মালামাল চুরি করে নিয়ে লিটনের ভাঙারি দোকানে বিক্রি করেছে।
নরসিংদী পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক আশ্রাফুল ইসলাম ভূঞা বলেন, আমাদের নিয়ম অনুযায়ী ভাঙারির দোকানের নামে কোন ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয় না।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুরাতন মালালের আড়ালে চুরির মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে, সবাই না। যারাই জড়িত থাকুক, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া আমাদের নিয়মিত একটা নজরধারী আছে, যতটুকু সম্ভব আমরা নজরধারীতেই রাখছি। যদি কোনো অভিযোগ পেলে যাচাইবাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইয়াশা নিটওয়ার লি. কোম্পানিতে চুরির ঘটনায় শিবপুর থানার ওসি মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে একজন এবং যে দোকানে বিক্রি করেছে সে ভাঙারি দোকানে অভিযান চালিয়ে আরও দুজনসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়। বাকি মালামাল উদ্ধারসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন