দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে রঙবেরঙের তরমুজ চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন আলাদিপুর ইউনিয়নের ভিমলপুর গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে আদর্শ কৃষক আব্দুল হামিদ। মালচিং পদ্ধতিতে ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি এই দুই জাতের তরমুজ চাষের সাফল্য দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খরিফ-১ মৌসুমে প্রথমবারের মতো উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাত ইউনিয়নের আটজন কৃষকের মাধ্যমে জনপ্রতি ২০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ব্লাক বেবি, তৃপ্তি ও অনুভব জাতের তরমুজ চাষের প্রদর্শনী করা হয়েছে।
এতে ফুলবাড়ী উপজেলায় ১ দশমিক ৬ একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ব্লাক বেবি, তৃপ্তি ও অনুভব জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এজন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আটজন কৃষককে তরমুজের বীজ, জৈব সার, জৈব বালাই নাশকসহ খেতের পরিচর্যার জন্য নগদ তিন হাজার টাকা প্রদানসহ তরমুজ চাষের জন্য সার্বিক কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এরই অংশ হিসেবে মালচিং পদ্ধতিতে ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক আব্দুল হামিদ। মালচিং পদ্ধতিটি মূলত চীন ও জাপানে বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার কারণে হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের ফলন হচ্ছে ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ।
সরেজমিনে উপজেলার ২নং আলাদিপুর ইউনিয়নের ভিমলপুর গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় আদর্শ কৃষক আব্দুল হামিদ তার নিজস্ব ২০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ চাষ করে আশানুরূপ সফলতা অর্জন করেছেন।
চারদিকে ধানের মাঠ। মাঝখানে দেখা যাচ্ছে সবুজ আর সবুজ। কাছে যেতেই দেখা মেলে অন্যরকম চাষ পদ্ধতি। মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক আব্দুল হামিদ। আব্দুল হামিদ তার তরমুজ খেত নিবিড় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা মাচার নিচে ঝুলছে নানা আকারের রঙবেরঙের তরমুজ। কোনোটি হলুদ, কোনোটি কালো আবার কোনোটি সবুজ। আধা কেজি থেকে আড়াই কেজি ওজনের রঙবেরঙের তরমুজ ঝুলছে মাচায়।
কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ চাষ করেন। খেতের পরিচর্যার একপর্যায়ে প্রতিটি গাছে ব্যাপক হারে ফুল আসতে শুরু করে। এরপর ফল ধরার পর মাত্র ৬৫ দিনের মধ্যেই গাছের তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়ে যায়। খেতের প্রতিটি তরমুজের ওজন আকারভেদে দুই থেকে তিন কেজি। স্থানীয় বাজারসহ সর্বত্রই বারোমাসি তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতি কেজি তরমুজ আকার ও প্রকার ভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন কৃষক আব্দুল হামিদ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, বর্ষাকালীন সময়ে তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়া যায়। কৃষি বিভাগ থেকে দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খরিফ-১ মৌসুমে প্রথম বারের মতো উপজেলার পৌর এলাকাসহ ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ১ দশমিক ৬ একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে আটজন কৃষক ব্লাক বেবি, তৃপ্তি ও অনুভব জাতের তরমুজ চাষ করছেন। এর মধ্যে ভিমলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ একজন রয়েছেন। এতে প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টন তরমুজ। কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী প্লেটের বাইরেও উপজেলার কৃষকরা নিজ উদ্যোগে প্রায় এক একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে ভিমলপুরের কৃষক আব্দুল হামিদের সাফল্যের পাশাপাশি ধান ও সবজি চাষের চেয়ে কম খরচে তরমুজ চাষে বেশি লাভ হওয়ায় এলাকার অন্য কৃষকরাও তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মন্তব্য করুন