নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের জোগান বাড়লে দাম কমে আবার জোগান কমলে পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ে। আবার এমনও দেখা যায় পণ্যের জোগান যখন স্থির, তখন ক্রেতার চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দাম বাড়ে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। আবার কিছু কিছু ভোগ্যপণ্য ক্রয় সীমা অতিক্রম করায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, যা ৬ মাস আগে ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। দেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ৭০০ থেকে ৭৫০ কেজি দরে কিনে খাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও নিম্ন মানুষের কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতো। তাদের কাছে গরুর মাংস দুর্লভ ও আভিজাত্যের খাবারে পরিণত হয়েছে। মনকে একরকম মানিয়েই নিতে হয়েছে, এই মাংস আমাদের জন্য নয়। তাই অনেকের কাছে গরুর ছাঁট কাট উচ্ছিষ্ট এখন ‘গরিবের বন্ধু’ মাংস।
এই চিত্র দেখা গেছে, দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার হাটবাজারগুলোতে। সামর্থ্য না থাকায় আর দামে কম হওয়ায় গরুর মাংসের স্বাদ নিতে নিম্ন আয়ের কিছু ক্রেতা ঝুঁকছে ছাঁট কাট গরুর মাংস কিনতে।
ছাঁট কাট মাংস কী, এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বীরগঞ্জ পৌর বাজারের মাংস ব্যবসায়ী রবি মিয়া জানান, গরুর মাংস বিক্রি হওয়ার পর চর্বি, পর্দা, রগ, মাথার সাইডের হাড়-মাংস, নাকের হাড়, ভুড়ির কুস্তাসহ মাংসের উচ্ছিষ্ট একত্র করা হয়। আর এগুলোকেই ছাঁট মাংস বলে।
উপজেলার ১১নং মরিচা ইউনিয়নের গোলাপগঞ্জ হাট, বীরগঞ্জ পৌর হাটসহ আশপাশের হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই ছাঁট মাংসের পসরা সাজিয়ে বসেছে কিছু দোকানিরা। ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে এসব উচ্ছিষ্ট মাংস পাওয়া যায়।
গোলাপগঞ্জ হাটে ছাঁট মাংস বিক্রেতা শেখ আব্দুল জব্বার জানান, বীরগঞ্জ পৌর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন কসাইয়ের কাছ থেকে ছাঁট মাংস প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা দরে সংগ্রহ করেন। এবং ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে সোমবার ও বৃহস্পতিবার হাটে বিক্রি করেন। প্রতি হাটে ২০ থেকে ২৫ কেজি ছাঁট মাংস বিক্রি হয়। তার এই মাংসগুলো কিনতে আসা অধিকাংশ নিম্ন আয়ের গরিব শ্রেণির মানুষ।
ছাঁট কাট মাংস ক্রেতা ভ্যানচালক মো. সাফিয়ার (৪৫) নিজের ক্ষোভ আর হতাশা উগড়ে বলেন, জায়গা জমি নাই, আমি দিন আনি দিন খাই। কোনো দিন ৩০০ কোনো দিন ৪০০ টাকা আয় হয়। পরিবারের সদস্য পাঁচজন, মেয়ে জামাই বেড়াতে এসেছে, নাতি গরুর মাংস খেতে চেয়েছে কিন্তু আমার গরুর মাংস কিনার সামর্থ্য নেই। তাই দামে কম হওয়ায় নাতিকে নিয়ে ছাঁট কাট মাংস কিনতে হাটে এসেছি।
বীরগঞ্জ পৌর হাটে ছাঁট মাংস ক্রেতা দিনমজুর বলেন, কোনো দিন ৪০০, আবার কোনো দিন ৫০০ টাকা আয় হয়, আবার কোনো দিন কাজ থাকে না। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, কবে গরুর মাংস খেয়েছি মনে নেই। বাচ্চাটা অসুস্থ, গরুর মাংস খেতে চেয়েছে। ৭০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস কেনার সার্মথ্য নাই, তাই কম দামে ছাঁট মাংস কিনতে এসেছি।
বীরগঞ্জ উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. ফরিদ বিন ইসলাম জানান, এই উচ্ছিষ্ট মাংস খাওয়া যাবে না তা না, তবে না খাওয়াই উত্তম। এই উচ্ছিষ্ট মাংস বিক্রি বন্ধে বিভিন্ন হাটবাজারে বেশ কয়েকবার অভিযানও পরিচালিত হয়েছে এবং ছাঁট মাংস জব্দ করে পুঁতে দিয়েছি। ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমে কয়েকবার জরিমানা করেছি।
মন্তব্য করুন