পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ছোট মাছুয়া। এ গ্রামে থেকে হুমায়ুন কবিরের চলার পথটা সহজ ছিল না। জীবনে চলার শুরুতে কয়েকবার হোঁচটও খেয়েছেন। তবে দমে যাননি। পরিবারের পরামর্শ নিয়ে ২০০০ সালে নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে ৪টি গরু কিনে শুরু করেন শখের খামার।
সেখান থেকে পেছন ফিরে আর তাকাতে হয়নি। ৪টি গরু দিয়ে শুরু করে বর্তমানে তার খামারে গরু রয়েছে ২৬০টি। এ বছর কোরবানি উপলক্ষে ২৬০টি গরুর মধ্যে ১১০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন তিনি।
মঠবাড়িয়া উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার তুষখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের রাস্তার পাশে দেখা মিলবে গাজী অ্যাগ্রো ফার্মের। খামারের প্রবেশ মুখ দেখলে কিছু মনে না হলেও খানিকটা ভেতরে গেলে দেখা মিলবে বিশাল এ খামার। আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে খামারটি। গরু চুরি থেকে রক্ষা করতে নেওয়া হয়েছে আধুনিক ব্যবস্থা।
এখন খামারটি দেখাশোনা করেন হুমায়ন কবিরের ছেলে নাসির উদ্দিন। খামারে ৩৫ জন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, সময়মতো খাবার দেওয়া, গরুর যত্ন নেওয়াসহ খামারের বিভিন্ন কাজের জন্য রাখা হয়েছে তাদের।
খামারে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ইন্ডিয়ান বোল্ডার, অস্ট্রেলিয়ান, নেপালিসহ অনেক জাতের গরু। এসব গরু সংগ্রহ করা হয় রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান জাতের ৫টি গরু রয়েছে। যেগুলোর ওজন হয়েছে প্রায় ৩০ মণ করে।
খামারে কর্মরত শ্রমিক হাসান কালবেলাকে বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ খামারে কাজ করি। আগে গ্রামে সব সময় কাজ থাকত না। সংসারে অভাব-অনটন লেগে থাকত। খামারে কাজ করায় প্রতি মাসে ভালো বেতনও পাই।
খামারের আরেক শ্রমিক মুসা হোসেন বলেন, আমি খামারে সাধারণত গরুর গোসল করাই আর দুধ দহন করি। সারা দিনে অনেক গুরুর দুধ দহন করতে হয়। এতে যা পারিশ্রমিক পাই তা দিয়ে সংসার খুব ভালোভাবে চলে যায়।
খামারের ইনচার্জ শরিফুল আলম নান্নু বলেন, এখানে যে গরু আছে সেগুলোর পরিচর্যা ও দেখাশোনা করি। মোটাতাজাকরণ করার জন্য আমরা কোনো ওষুধ ব্যবহার করি না। শুধু দানাদারযুক্ত খাবার দেই গরুগুলোকে।
হুমায়ুন কবিরের ছেলে নাসির উদ্দিন বলেন, শখের বয়সে আমার বাবা জমানো টাকা দিয়ে ৪টা গরু কিনে। এখন আমার খামারে ২৬০টি গরু রয়েছে। এ বছর কোরবানি উপলক্ষে ২৬০টি গরুর মধ্যে ১১০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা গমের ভূসি, ভুট্টা, ছোলা এবং প্রতিদিন তিনবার করে গোসল করাই। খামারে প্রতিদিন ৩৫ জন শ্রমিক কাজ করে। তাদের একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরে ভালো লাগছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহা. নুর আলম কালবেলাকে বলেন, কোরবানি উপলক্ষে মঠবাড়িয়া উপজেলায় ছোট বড় মিলে ১২৮৭টি পারিবারিক ও বাণিজ্যিক খামারে ৯ হাজার ৭০০ পশু লালনপালন করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণ করে পাশাপাশি অন্য উপজেলার বাজারে পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, ছোট মাছুয়াতে পশুপালনের যে উদ্যোগটি নিয়েছে এটি আদর্শ একটি খামার। কোনো মোটাজাতকরণ ওষুধ ছাড়াই দানাদার খাবার খাইয়ে গরুকে লালন পালন করে যাচ্ছে। হুমায়ুন কবির ও তার ছেলে নাসির উদ্দীন অনেক দিন ধরে খামারের সঙ্গে রয়েছেন। আমি আশা করছি, তিনি আরও ভালো কিছু করবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
মন্তব্য করুন