উদ্বোধনের দীর্ঘ ৭ মাস পর বেনাপোল-মোংলা কমিউটার ট্রেন চালু হয়েছে। এ সময় ট্রেনে চার শতাধিক যাত্রী ছিল।
শনিবার (১ জুন) সকাল ১০টায় বেনাপোল থেকে মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে মোংলা কমিউটার ট্রেন। যদিও ট্রেনটি সকাল সোয়া ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি বলে জানান বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।
২০০০ সালে বেনাপোল ও খুলনার মধ্যে চালু হয় বেতনা এক্সপ্রেস নামে একটি কমিউটার ট্রেন। প্রতিদিন ২ বেলা সকাল-বিকেল ট্রেনটি খুলনা ও বেনাপোলের মধ্যে চলাচল করত। সম্প্রতি খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত নতুন রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় বেতনা এক্সপ্রেসের রুট বর্ধিত করে মোংলা পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষ।
উদ্বোধনের দিন বেনাপোল রেলস্টেশনে কোনো আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও প্রথম দিনেই স্টেশন ভর্তি যাত্রীদের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।
বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের পরিচালক আবু নাঈম জানান, মোংলা কমিউটার ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল সোয়া ৯টায় বেনাপোল থেকে মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় পৌঁছাবে মোংলা বন্দর রেলওয়ে স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনটি প্রতিদিন রওনা হবে ১টার সময়। বেনাপোলে পৌঁছাবে বিকেল সাড়ে ৪টায়। বেনাপোল থেকে ট্রেনটি বিকেলে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার সময় বেতনা এক্সপ্রেস নাম নিয়ে চলাচল করবে।
জানা যায়, বেনাপোল রুটে যাত্রী সেবা বাড়াতে ব্যবসায়ী ও পাসপোর্টধারীদের দাবির মুখে রেল কর্তৃপক্ষ বেনাপোল-খুলনা-মোংলা রুটে চালু করেছে যাত্রী সেবা। ট্রেন চলাচলের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যায়ে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত নতুন রেলপথ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। নতুন এই রুটে ‘মোংলা কমিউটার’ নামে একটি ট্রেন চলাচল শুরু করেছে শনিবার থেকে। খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত চলাচল করে বেতনা এক্সপ্রেস নামে একটি লোকাল ট্রেন। সেই ট্রেনটি ফেরার পথে খুলনার ফুলতলা জংশন থেকে মোংলার দিকে যাত্রা করবে, তখন ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ট্রেনটি ‘মোংলা কমিউটার’ নাম ধারণ করে চলবে।
প্রতি মঙ্গলবার ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধ। খুলনা থেকে ভোর ৬টায় বেনাপোলে পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়। পরে বেনাপোল থেকে ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে মোংলা পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। দুপুর ১টায় মোংলা থেকে ছেড়ে ট্রেনটি বেনাপোল পৌঁছাবে বিকেল সাড়ে ৪টায়।
২০১০ সালে একনেকে অনুমোদনের পর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। পরে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।
দীর্ঘ ৯১ কিলোমিটার নতুন এ রেলপথে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫টি প্ল্যাটফর্ম, ১০৭টি কালভার্ট, ৩১টি ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাসের নির্মাণ করা হয়েছে এই রেল সড়কে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বিপুল বলেন, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি এই রুটে মালবাহী ট্রেন চালু করা হলে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে দুই বন্দরের মধ্যে গতিশীলতা ফিরে আসবে।
বেনাপোল রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইনচার্জ আসাদুজ্জামান রানা জানান, বেনাপোল-মোংলা রেলসেবা চালুতে বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের ব্যস্ততা বাড়বে। এতে যাত্রীদের নিরপত্তা ব্যবস্থাও বাড়ানো হয়েছে।
বেনাপোল রেলস্টেশনের ম্যানেজার সাইদুজ্জামান জানান, বেতনা এক্সপ্রেস প্রতিদিন দুইবার খুলনা বেনাপোলের মধ্যে চলাচল করত। মোংলার সঙ্গে সংযুক্তির পর থেকে শনিবার সকালে ছেড়ে যাওয়া প্রথম ট্রেনটি ফুলতলা হয়ে মোংলা যাবে। অন্তত ১৫টি স্টেশনে এই ট্রেনটি থামবে।
মন্তব্য করুন