ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। ঝালকাঠিতে আবাদি ৬ হাজার ১৯০ হেক্টর জমির কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ২৫১ হেক্টর জমির ২ হাজার ৭০টি পুকুর ও ১৫৯টি মাছের ঘের। এতে শতকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক ও মৎস্য চাষিরা। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সব ফসলই এখন পানির নিচে তলিয়ে আছে।
ঝালকাঠি কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলায় এ বছর আউশ বীজতলা ৫৮০ হেক্টর, রোপিত আউশ ৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর, আখ ২১৫ হেক্টর, চিনা বাদাম ২০ হেক্টর, মরিচ ১০ হেক্টর, গ্রীস্মকালীন শাকসবজি ২ হাজার ৩২৫ হেক্টর, পেঁপে ১৪৫ হেক্টর, কলা ৩৭০ হেক্টর, পান ৩২০ হেক্টর ও তিল ৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করেছিলেন কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছিল। এতে লাভের আশায় বুক বেঁধে ছিলেন চাষিরা। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন বেশি দিন টিকেনি। এর মধ্যে ৬ হাজার ১৯০ হেক্টর জমির ফসল ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। পানি না কমলে ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। লাভের মুখ তো দূরের কথা, এ ক্ষতি সহজেই পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তারা। তাই এখন দুশ্চিন্তায় ভুগছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে জলোচ্ছ্বাসে জেলার অধিকাংশ মাছের ঘের ও ছোট বড় পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা কয়েক কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে বলে দাবি করেছেন মৎস্য চাষিরা। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া তারা কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। ঝালকাঠি জেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সুপার সাইক্লোন সিডরকেও হার মানিয়েছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে একজন নিহত ও এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক ও মৎস্য চাষিরা। তারা এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ঝালকাঠির প্রতাপ বাজার সংলগ্ন এলাকার কৃষক আছলাম হোসেন বলেন, আমার বাগানের সকল সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আমার মরিচ, পেঁপেঁ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।
ঝালকাঠির চরভাটারাকান্দা এলাকার আল আমিন হোসেন বলেন, আমার এক একর জমির কৃষিপণ্য সব পানিতে নিমোজ্জিত। কোনোভাবেই পানি কমছে না। আমার ক্ষেতের সব সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নলছিটি উপজেলার শীতলপাড়া গ্রামের মৎস্য চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, শিমুলতলা এলাকায় আমার ২০ একর জমির ওপর একটি মাছের ঘের আছে। রিমালের তাণ্ডবে পানি উঠে সব মাছ ভেসে গেছে। আমি তিন বছরে মাছ ধরিনি। অনেক বড় হয়েছিল মাছ। এতে আমার ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কোনোভাবেই পুষিয়ে উঠতে পারব না।
রাজিব চৌধুরী নামে এক মাছের ঘের ব্যবসায়ী জানান, তার মাছের ঘের তলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ জোয়ারে ভেসে গেছে। এ রকম আরও অনেক ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। ঘেরের ওপর অতিরিক্ত জাল দিয়েও মাছ আটকে রাখা যায়নি। কারণ, পানির পরিমাণ ও স্রোত ছিল অত্যধিক।
জামুরা গ্রামের মৎস্য চাষি রিপন সিকদার বলেন, আমার ১৫ একর জমির একটি মাছের ঘের তলিয়ে সব মাছ ভেসে গেছে। আমার ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবের জলোচ্ছ্বাসে ঝালকাঠির প্রায় সবগুলো মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ণয় করা হয়নি, কাজ চলছে। তবে যে ক্ষতি হয়েছে, তা আগে কোনো সময় ঘটেনি।
ঝালকাঠির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠিতে যেসব ফসল রোপিত ছিল সবগুলোই পানির নিচে তলিয়ে আছে। পানি না কমলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা চেষ্টা করছি, কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে।
মন্তব্য করুন