কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে পাওনা টাকা আদায়ের নামে এক গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বিচার না পেয়ে ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী একসঙ্গে বিষপান করেন। এতে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। স্বামী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত শুক্রবার (২৪ মে) ওই দম্পতি একসঙ্গে বিষপান করেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবশেষে বুধবার (২৯ মে) দুপুরে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলেজপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী গৃহবধূর নাম আশা বেগম। তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। তাদের ঘরে তিন বছরের একটি শিশু সন্তান রয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার সদর ইউনিয়নের হলপাড়া গ্রামের আবুসামার ছেলে জয়নাল মিয়া এবং তার সহযোগী কারিগর পাড়ার শুক্কুর কসাই, ডাকাত পাড়ার আলম কসাই ও টাঙ্গাইল পাড়ার সোলেমান।
মৃত্যুর আগে গত ২২ মে স্থানীয় কয়েকজনের কাছে দেওয়া ওই গৃহবধূর জবানবন্দির একটি অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। তাতে ওই গৃহবধূ পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা করেছেন। রোমহর্ষক বর্ণনায় উঠে এসেছে কীভাবে জয়নাল ও সহযোগীরা দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেছে।
বর্ণনায় ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন, তার বাবা নেই। মা গৃহকর্মীর কাজে বিদেশে গেছেন। স্বামী টাঙ্গাইলে শ্রমিকের কাজ করেন। স্বামীর ধার করা পাওনা টাকা দিতে না পারায় স্থানীয় জয়নাল মিয়া গত রমজান মাসের শুরু থেকে তাকে ধর্ষণ শুরু করেন। পরে তার সহযোগী আলম কসাই, শুক্কুর কসাই ও সোলেমানসহ তাকে দিনের পর দিন পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এই নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি বাধ্য হয়ে তার স্বামীকে বিস্তারিত ঘটনা জানান। পরে স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিচার দিলেও মেলেনি বিচার।
ওই গৃহবধূ জানান, পাওনা টাকা আদায়ের অছিলায় প্রথমে জয়নাল মিয়া তাকে নিয়মিত ধর্ষণ করতে থাকে। পরে জয়নাল তার সহযোগী আলম, শুক্কুর ও সোলেমানকে নিয়ে এসে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মোবাইল ফোনে সেই ধর্ষণের ভিডিও করে তা প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানাতে ভয় দেখায়। এরপর ব্লাকমেইল করে জয়নাল ও শুক্কুর মিলে তাকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করে। পাশবিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ এই গৃহবধূ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে বিষয়টি তিনি তার স্বামীকে জানান।
ওই গৃহবধূ বলেন, ‘এরপরও জয়নাল আবার ফোন দিয়ে আমার কাছে টাকার চাপ দেয় এবং টাকা কীভাবে তোলা লাগে সে হুমকিও দেয়।
ওই গৃবধূর স্বামী বলেন, ‘আমি টাঙ্গাইল থেকে ফিরে দেখি বউয়ের শরীর ভাইঙ্গা গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলে সে শুধু কান্নাকাটি করে। পরে সব জানতে পারি। বিচার চাইলে তারা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। জয়নাল আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যসহ স্থানীয়দের কাছে বিচার দিলেও কোনো সুরাহা মেলেনি।
এরপর গত শুক্রবার (২৪ মে) ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী বিষপান করেন। গুরুতর অবস্থায় তাদের প্রথমে রাজিবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে জামালপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু আর্থিক সামর্থ না থাকায় এই দম্পতি বাড়িতে চলে আসেন। বুধবার বাড়িতেই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দম্পতির বিষপানের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে থানা পুলিশ ম্যানেজ বাদেও ভুক্তভোগীদের ২০ হাজার টাকা দেওয়ার বিনিময়ে ঘটনা মিমাংসার সিদ্ধান্ত হয়। জয়নাল ভুক্তভোগীদের চিকিৎসায় ২০ হাজার টাকা দিলেও তা নিতে অস্বীকৃতি জানান ওই দম্পতি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে জয়নাল মিয়ার নাম্বারে ফোন দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ভিকটিমের (গৃহবধূর) মামা আমাদের বলেছেন যে তিনি বিষ খেয়েছেন। তাই অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন