অবশেষে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হয়েছে আলোচিত মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে। এ ছাড়াও বাচ্চাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে প্লে-জোন। চোখের সমস্যায় ভোগা রোগীদের বিশেষ সেবাদানের ব্যবস্থাসহ নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। আর এর সবই সম্ভব হয়েছে মিল্টন গ্রেপ্তারের পর নতুন দায়িত্ব নেওয়া সামসুল হক ফাউন্ডেশনের আন্তরিক দায়িত্ব পালনে।
বুধবার (২৯ মে) সাভারের কমলাপুর বাহেরটেক এলাকায় এই আশ্রমটিতে গিয়ে দেখা যায় বর্তমানে আশ্রমে ৫১ জন বৃদ্ধা মহিলা, ৪৯ জন বৃদ্ধ পুরুষ ও ২৮ জন শিশুসহ মোট ১২৮ জন সেবাগ্রহিতা রয়েছেন।
জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তারের পর গত ৫ মে এই আশ্রমটি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল সামসুল হক ফাউন্ডেশন। এ সময় কথা হয় সামসুল হক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নিয়োগকৃত সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. লোকমান হাকিমের সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে জানান, আমাদের ফাউন্ডেশন গত ২৫ দিন ধরে এই আশ্রমটি পরিচালনা করে আসছে। এ পর্যন্ত আমাদের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আমরা প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর এখানে বেশকিছু অসংগতি লক্ষ্য করেছি। তবে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি অসংগতিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো ঠিক করার। যেমন এখানে কোনো চিকিৎসক ছিল না আমরা এখানে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছি। এখানে কোনো রোগীকেই আশ্রমের বাইরে নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো না আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশকিছু রোগীকে রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছি।
তিনি জানান, এখানে অনেক সেবাগ্রহিতার চোখের নানান সমস্যা ছিলো। তারা আমাদের জানায় আগের কর্তৃপক্ষ বারবার চক্ষু ডাক্তার আসার আশ্বাস দিলেও চোখের কোন টিট্রমেন্ট পায়নি। তাই আমরা এখানে বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসক দ্বারা স্পেশাল আই কেয়ার ক্যাম্প পরিচালনা করে প্রায় ২৮ জন রোগীকে চোখের লেন্স বসানোর জন্য সিলেক্ট করেছি এবং বাকিদের চোখের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছি। আর সবচেয়ে বড় যে অভিযোগের বিষয়টি ছিল এখানে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কোনো মৃত্যু সনদ নেওয়া হতো না। কিন্তু আমরা দায়িত্ব নেবার পর মোট ৫ জন ব্যাক্তি এখানে মৃত্যুবরণ করেছে, আমরা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদের প্রত্যেকের মৃত্যু সনদ নিয়েছি। মৃতদের মধ্যে একজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ও বাকিদেরকে এখানেই দাফন করা হয়। পাশাপাশি এখানে আশ্রিত শিশুদের খেলাধুলার জন্য কোনো ব্যবস্থা ছিল না আমরা শিশুদের খেলার জন্য প্লে-জোন তৈরি করেছি। যেটি শিশুদের মানুষিক ও শারীরিক বিকাশে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
এ সময় আশ্রমটি ঘুরে একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন। প্রতি সপ্তাহে ডাক্তার দেখাতে পারছেন। খাবারের মানও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে।
খোদেজা বেগম নামে এক বৃদ্ধা বলেন, অনেকদিন থেকেই আমার চোখে দেখতে সমস্যা হতো আগে কয়েকবার বলেও কোন চিকিৎসা পাইনাই। কিন্তু এবার ডাক্তার আইসা আমার চোখ পরীক্ষা করে ওষুধ দিছে এতে আমার অনেক আরাম হইছে।
ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের শিশু রাজুর ছেলে আশিক বলেন, আমাদের এখানে আগে খেলার কোনোকিছু ছিল না এখন অনেক খেলনা আনছে আমরা এগুলা দিয়ে খেলতে পারি। কিন্তু আমার এখানে আর ভাল্লাগেনা আমি বাড়ি যাইতে চাই তবে এরা আমাকে বাড়ি যাইতে দেয় না। খালি বলে মিল্টন ভাই না আসা পর্যন্ত কেও না কি কোথাও যাইতে পারবে না।
এদিকে বুধবার (২৯ মে) থেকে সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োগকৃত একজন প্রশাসক এই আশ্রমটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে নব নিযুক্ত প্রশাসক ও সাভার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শিবলীজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি কালবেলাকে জানান, এখন মূলত সবকিছু তদারকি করে দেখা হচ্ছে কোথাও কোনো অসংগতি আছে কি না। আমাদের চেষ্টা থাকবে পুরো আশ্রমটির সকল কার্যক্রম সুনিপুণভাবে পরিচালনা করা। এবং সকল অসংগতি নিরসন করা। এ বিষয়ে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কাম্য।
উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেখানে তার নানা অপকর্মের কথা বিস্তারিত তুলে ধরা হয় যার মধ্যে ছিলো, যেই প্রতিষ্ঠানের মানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য তার এত পরিচিতি, সেই আশ্রম ঘিরেই ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেন মিল্টন। যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, প্রচার করছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ। লাশ দাফন করার যে হিসেব দিচ্ছেন, তাতেও আছে বিরাট গরমিল।
সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রিসহ একাধিক ব্যক্তিকে মারধর, জমি দখল, একাধিকবার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের মারধর, সাংবাদিকদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ ও বরিশালে চার্চ দখলের মতো অসংখ্য অভিযোগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ মে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
মন্তব্য করুন