দিনাজপুরে রাতের আঁধারে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে পুরো শহর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। রাত থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় পুরো শহর। উড়ে গেছে টিনের চাল, উপড়ে গেছে শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি, ভেঙে পড়েছে গাছপালা। লিচু মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার লিচু আম নষ্ট হয়েছে। শিশুসহ আহত হয়ে প্রায় ১৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বুধবার (২৯ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে দিনাজপুর। রাত ৩টার পর হঠাৎ প্রবল বেগে ৫ মিনিটে মতো ঝোড়ো হাওয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝড়ের কারণে পুরো শহরজুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। শহরের বেশিরভাগ এলাকা টিনের ঘরবাড়ি ক্ষতির মুখে পড়েছে। রাস্তার দুই ধারের গাছ ভেঙে পড়ায় দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভোররাতে সেগুলো সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ ও পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, কালবৈশাখী ঝড়ে তীব্র বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৫-৬০ কিলোমিটার। পাশাপাশি প্রায় ৩০ সেকেন্ডের মতো শিলাবৃষ্টি হয়। মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ মিলিমিটার।’
কথা হয় শহরের কসবা এলাকার লিচু চাষি সোলেমান হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, আমার চায়না থ্রি লিচু উঠতে শুরু করেছে। চার বিঘা জমিতে এবার প্রায় ৩০ লাখ টাকার লিচু বিক্রয়ের আশা করেছিলাম কিন্তু রাতের কয়েক মিনিটের ঝড়ে সব স্বপ্ন শেষ হয়েছে। এখন লিচুতে পানি পাওয়ার কারণে পুরো টাকায় লোকশানের মুখে পড়বে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু তুষারের বাবা জানান, রাতে আমরা ঘরে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের সময় ঘরের টিনগুলো উড়ে যায়। পরে শিশু তুষারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, রাতে আঘাত হানা কালবৈশাখী ঝড়টি ১০ মিনিটের মতো স্থায়ী ছিল। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৫-৬০ কিলোমিটার। ঝড়ের পাশাপাশি মিনিট খানেক শিলাবৃষ্টি হয়। এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ মিলিমিটার।
এদিকে, জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১০ বান্ডিল টিন ও ৩০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, ঝড়ের জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে কিছু টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। তালিকা তৈরি করে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে কখন বিদ্যুৎ আসবে তার নিশ্চয়তা নেই।
মন্তব্য করুন