বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে তিনশতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও খামারিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে মুষলধারে বৃষ্টি ও জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। এতে মাছের কয়েক হাজার ঘের ও লক্ষাধিক একর ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে খামারি ও চাষির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, এবারে ঝড়ের সময় যে প্লাবন হয়েছে তা এর আগে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় কখনো দেখা যায়নি। আবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের মতো দীর্ঘসময় ঝড়ের তাণ্ডব দেখেননি তারা। এ ঝড় রাত কাটিয়ে গোটা দিনের অর্ধেকের বেশি সময় অর্থাৎ ১২-১৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রভাব খাটিয়েছে। যা সিডর, আইলা, নার্গিসের সময়ও এমনটা দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সরেজমিনে উপজেলা ঘুরে এ ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। রোববার (২৬ মে) রাত থেকে উপজেলার ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে এবং উপড়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় সড়কের ওপরে গাছ পড়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে অন্ধকারে আচ্ছন্নতা হয়ে আছে। অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেন। তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সূত্রে জানা যায়, জোয়ারের পানি বেড়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে ফরিদপুর, দুর্গাপাশা ও নিয়ামতি ইউনিয়নের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। পুরো উপজেলায় লাখো মানুষ পানিবন্দি ছিল। বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে। দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও মৎস্য চাষিদের জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় কোথাও বাঁধ ভাঙে আবার কোথাও বাঁধ উপচে পুকুর ও ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা নিচু এলাকার প্রায় সবগুলো ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
তবে উপজেলা সূত্র বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে তিনশতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত, পানি বেড়ে প্লাবিত হয়ে মাছ পানিতে ভেসে গিয়ে, গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়ে এতে পঞ্চাশ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ-১ বাকেরগঞ্জ জোনাল অফিসার গোবিন্দ চন্দ্র জানান, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে, কয়েকটি খুঁটি ভেঙে অনেকগুলো আঁকাবাঁকা হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে কাজ চলছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে উপজেলায় তিন শতাধিক বসতঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ, মন্দিরের ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সব মানুষ যাতে খাবার পায় সে বিষয়ে চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছ। তিনি সার্বিক বিষয় মনিটরিং করছেন। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বোচ্চ সাহায্য-সহযোগিতাও করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মন্তব্য করুন