কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪, ১০:১০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঘূর্ণিঝড় রিমাল

লন্ডভন্ড পিরোজপুর উপকূল, শত কোটির ক্ষয়ক্ষতি

পিরোজপুরের কাউখালীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত। ছবি : কালবেলা
পিরোজপুরের কাউখালীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত। ছবি : কালবেলা

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়েছে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের কাউখালীর বিভিন্ন এলাকা। ঘূর্ণিঝড়ের শুরু থেকে টানা দুই দিন ঘুমহীন রাত কেটেছে উপকূলের বাসিন্দাদের।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার (২৭ মে) রাতে উপকূলে আঘাত হানে। রোববার বিকেল থেকে একটানা ২০ ঘণ্টা রিমালের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে।

এর প্রভাবে উপকূলের জেলা পিরোজপুরে কাউখালী উপজেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এতে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। ফলে উপকূলীয় এলাকায় অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে, গ্রামের পর গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। এখন উপকূলের মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে।

ভারি বর্ষণ ও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বসতবাড়িতে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল, বসতবাড়ির ইলেকট্রনিক্স আসবাবপত্র ভেসে গেছে। ডুবেছে ফসলের ক্ষেত, উপড়ে গেছে বহু গাছ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে উপকূলজুড়ে।

রোববার দুপুরে বাঁধ ভেঙে উপজেলার সকল গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক কাঁচা/পাকাবাড়ি ঘর বিধ্বস্তসহ উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। কাউখালীর শহর থেকে গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই, নিচতলা পানিতে ডোবেনি। গ্রামগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। এরকম পানি এর আগে কেউ দেখেনি। মোবাইলের নেটওয়ার্কও নেই।

কাউখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের লাইনে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কবে বিদ্যুৎ সবখানে চালু হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তারা আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গভীর নলকূপ বিভিন্ন জায়গায় পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ও বৃষ্টির কারণে বহু জায়গায় গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন রাস্তার উপড়ে পরে থাকা গাছগুলো অপসারণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দিয়েছে। উপজেলার হাজারো ব্যবসায়ীর দোকানে পানি ঢুকে কোটি কোটি টাকার তাদের মালামাল নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া হাজারো মানুষের বসতবাড়িতে পানি ঢুকে তাদের আসবাবপত্র ইলেকট্রনিক্স জিনিস নষ্ট হয়েছে। সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াদ বলেন, ইতিহাসে এত বড় দুর্যোগে কাউখালীতে যে কত কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তা হিসাব করা কষ্টসাধ্য। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, এলাকার মৎস্য খামারের অন্তত ৪০টি মাছের ঘের, ২৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোমা দাস বলেন, ইরি ধানের ফসল প্রায় ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছে।

সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ বহুতল ভবনে ২০ হাজার মানুষকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখন দুর্যোগকবলিত মানুষের ভিড় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাবার রান্না করে সরবরাহ করা হচ্ছে। অনেক পরিবার নিজের বসতি ফেলে গ্রামের পাকা কোনো বাড়িতেও আশ্রয়ের জন্য গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল থেকে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হলে নদীতীরের মানুষ আতঙ্কে পার্শ্ববর্তী সাইক্লোন শেল্টারে সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় করে। এ সময় নদীগুলোতে জোয়ারের পানি বাড়ে এতে গ্রামের কয়েক হাজার কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জোয়ারের পানি পাকা সড়ক উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় বেশ কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার শহরের ভিতরের ৪ থেকে ৫ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়।

উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হাজারো কৃষক ও মৎস্য খামারি রিমালে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এতে অন্তত এক হাজার হেক্টর জমির ফসল জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে। এর মধ্যে আউশ বীজ তলাসহ, পান, সুপারি ফল ও শাকসবজি ক্ষেতসহ ৩০০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী সর্বমোট ৪-৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষকের কাছে এর ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি।

কাউখালী ইউএনও সজল মোল্লা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচাঘর, ব্যবসায়ীদের রবিশস্য, সড়ক, বিদ্যুৎ ও বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া মনু বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবার আশ্বাস দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় রিমাল
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে ইসলামীসহ ৩ ব্যাংকের চাকরিচ্যুতদের সড়ক অবরোধ

সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

ফ্যাসিবাদী নীতির কারণে আ.লীগের প্রতি জনগণের ঘৃণা জন্মেছিল : ডা. রফিক

আইপিএল নিলামে দল পেলেন না ওয়ার্নার

ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নিলেন বিএনপি নেতারা

ইসিকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ আমীর খসরুর

রাজবাড়ীতে আ.লীগ নেতার ডিগবাজি, করছেন দখলদারি

ধোবাউড়ায় ছয় নারী ফুটবলারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে কাল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রবাসীদেরও ভূমিকা ছিল : মঈন খান

১০

সীমান্তে জড়ো হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা, নামবে যুদ্ধে

১১

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল বরখাস্ত

১২

ওয়ালটনের ৩৫০ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ

১৩

আন্দোলনে নিহত রিপনের মরদেহ ১১০ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন

১৪

ওসির কথায় উজ্জীবিত হয়ে থানায় পিস্তল নিয়ে এলো চার শিশু

১৫

পড়তে ভুলে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা?

১৬

নভেম্বরের ২৩ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২০ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা

১৭

আন্দোলনে আহতদের তালিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির নাম

১৮

নির্বাচন কখন, জানালেন নতুন নির্বাচন কমিশনার

১৯

ক্রীড়াঙ্গনের মাধ্যমে অবৈধ মাদককে ‘না’ বলতে পারব : আমিনুল হক

২০
X