মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
গাজী ফারহাদ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪, ০৭:০৪ পিএম
আপডেট : ২৯ মে ২০২৪, ০৭:০৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

আর চাই না ভাসতে, এবার চাই বাঁচতে

ঘূর্ণিঝড় রিমালে বিধ্বস্ত সাতক্ষীরা উপকূলের একটি চিত্র। ছবি : কালবেলা
ঘূর্ণিঝড় রিমালে বিধ্বস্ত সাতক্ষীরা উপকূলের একটি চিত্র। ছবি : কালবেলা

‘মিথ্যা আশ্বাস আর নয়; এবার টেকসই বাঁধ চাই। আর চাই না ভাসতে, এবার চাই বাঁচতে। উপকূলের কান্না, শুনতে কি পান না’, এমন বিভিন্ন স্লোগান তুলে মানববন্ধন করেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের সহস্রাধিক তরুণ ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

ঘূর্ণিঝড় রিমালসহ বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মঙ্গলবার (২৮ মে) বিকেলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী পয়েন্টে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের ওপর এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

উপকূলবাসীর আয়োজনে মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা আব্দুল মাজেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আবু তাহের, মোক্তার হোসেন, তরিকুল, স ম ওসমান গনি সোহাগ, মাসুম বিল্লাহ, নিসাত, রায়হান প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা বলেন ঘূর্ণিঝড় রিমাল নয় প্রতিবারই এমন পরিস্থিতিতে কর্তা ব্যক্তিরা শুধু আশ্বাসের বুলি আওড়ান। শোনান নানা ধরনের মেগা প্রকল্পের গল্প। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের এ অঞ্চলে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপকূলের মানুষকে বাঁচাতে টেকসই বেড়িবাঁধের বিকল্প নেই। এটি নির্মাণ করতে ব্যর্থ হলে সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন। আমরা বারবার নয়, একবারই মরতে চাই।

মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, ষাটের দশকের বেড়িবাঁধ প্রায় অর্ধশত বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। এ কারণে সামান্য ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের কথা শুনলেই আঁতকে ওঠে উপকূলের মানুষ। তারা ঝড়কে নয়, উপকূলের মানুষ ভয় পায় বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়াকে।

উপকূলীয় এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে ২০০৯ সালে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আইলায় এ এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয় উল্লেখ করে তারা বলেন, কয়েক বছর সাগরের লোনাপানিতে হাজার হাজার পরিবারকে বন্দি থাকতে হয়। এ সময় টিকতে না পেরে শত শত মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অন্য এলাকায় চলে গেছে।

তারা আরও বলেন, আইলার সময়ই উপকূলীয় এলাকার ভঙ্গুর বাঁধ টেকসই করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু পার্শ্ববর্তী গাবুরায় মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ক্ষতিগ্রস্ত এই এলাকায় এক যুগেও তা আর হয়নি। এ কারণে সামান্য জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে এ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

মানববন্ধনটিতে বক্তরা অভিযোগ করে বলেন, উপকূলের মানুষকে জিম্মি করে বাঁধ ভাঙার আশায় থাকেন এক শ্রেণির অসাধু জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদাররা। বাঁধ মেরামতের নামে তারা লাখ লাখ টাকা লোপাট করেন। তাই উপকূলীয় এলাকার মানুষকে বাঁচাতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান বক্তারা।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ। মূলত নদীতে ভাটার সময় ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানায় বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানিতে জনপদ প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে সাতক্ষীরা উপকূল।

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সাতক্ষীরায় বিধ্বস্ত হয়েছে ১ হাজার ৪৬৮টি কাঁচা ঘরবাড়ি। এরমধ্যে আংশিক নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ১৯২টি এবং সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে ২৭৬টি ঘরবাড়ি। জেলার ৭৮টির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৩টি ইউনিয়নে ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৬ জন মানুষ দুর্যোগে পড়েছেন। এ ছাড়া ৬০৪ হেক্টর জমির ফসল এবং ২০০ হেক্টর মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৪০ হাজার ১৯১ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালীতে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মৃতই ব্যক্তির নাম শওকত মোড়ল (৬৫)। তিনি নাবিদখালী গ্রামের মৃত নারীর মরনের ছেলে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ জেলার কয়েক লাখ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত এক দশকে মে মাসে এখানে আটটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ৪ মে ঘূর্ণিঝড় ফণী, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালের ২৬ মে ইয়াস এ ছাড়া ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরা ও ২০১৩ সালের ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানে। তবে এই দশকে সুন্দরবন সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিডরে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজিবুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে, শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়াসহ ১২টি ইউনিয়নে ৫৪১টি কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩টি সম্পূর্ণ এবং ৪৪৮টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল জোয়ারে নদীর পানি ছাপিয়ে কোথাও কোথাও লোকালয়ে প্রবেশ রলেও বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া যায়নি। তবে টানা বর্ষণে কিছু মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় রিমাল
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

শাহরিয়ার কবির আটক

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ভূমি উপদেষ্টার পরিদর্শন, হয়রানি ছাড়া নামজারি খতিয়ান পেয়ে উৎফুল্ল নাজিম  

চট্টগ্রামে জশনে জুলুশে মানুষের ঢল  

বন্যা পরবর্তী প্রাণী চিকিৎসায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১০

‘দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে’

১১

নার্সের ভুলে ৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

১২

‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ’ করার প্রস্তুতি বিএনপির

১৩

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত

১৪

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৫

সিরাজগঞ্জে কবরস্থানে মিলল অস্ত্র ও গুলি

১৬

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতবিনিময়

১৭

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

১৮

তিন বিভাগে ভারি বৃষ্টির আভাস

১৯

আমার কষ্ট নেই, আজ আমরা স্বৈরাচারমুক্ত : আহত তানভীরের পিতা

২০
X