ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পটুয়াখালীর বাউফলে ঘরের নিচে চাপা পড়ে আ. করিম হাওলাদার নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সড়ক ভেঙে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে চার দিন ধরে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে সরেজমিনে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার (২৬ মে) রাতে ঝড়ের সময় বৃদ্ধ করিম (৬৫) পরিত্যক্ত ওই ঘরে আশ্রয় নেন এবং রাতের যে কোনো সময় ঝোড়ো হাওয়ায় ঘর ভেঙে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাউফল পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত করিম উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ধানদি গ্রামের মৃত সোবহান হাওলাদারের ছেলে।
এদিকে সাত থেকে আট ফুট উচ্চতার অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়ক ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাাবিত হয়। এতে চন্দ্রদ্বীপ, নাজিরপুর, ধূলিয়া, কাছিপাড়া, কালাইয়া, কেশবপুর এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচ সহস্রাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
কালাইয়া-ভরিপাশা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ৬টি স্থানে ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াত করে।
এ ছাড়াও জোয়ারের তোড়ে নদীবেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরকচুয়া এলাকার আধা কিলোমিটারেরও বেশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার। উপজেলার দেড় সহস্রাধিক ঘর ভেঙে গেছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে এ উপজেলার ১ লাখ ৫ হাজার গ্রাহক। বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। বর্তমানে অর্ধ শতাধিক রোগী ভর্তি আছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। বিদ্যুৎ না থাকায় সব ধরনের প্যাথলজি পরীক্ষা বন্ধ। বন্ধ রয়েছে পানি সরবরাহ।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুর রউফ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, একটি জেনারেটর আছে, সেটি দিয়ে পানি উঠানো যায় না। এমনকি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করানো সম্ভব না।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাউফল জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, শনিবার (২৫ মে) বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের কাজ করার কারণে বন্ধ ছিল। পরের দিন ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ওপর গাছ পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ২৫টি খুঁটি ভেঙে গেছে, দুইশ জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে। এ কারণে চার দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। মাঠকর্মীরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায়।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, দেড় সহস্রাধিক ঘর ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ দুইশ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য সব দপ্তরের লোকজন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন