সাতক্ষীরার উপকূল এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এবারও ঢাল হয়ে এ অঞ্চলকে ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে এই বন। তবে উপকূলীয় এলাকার নদ-নদী এখনো উত্তাল। এ ছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে তার ছিঁড়ে ও সঞ্চালন লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ে জেলার ছয় লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
রোববার (২৬ মে) দিন ও রাতে ব্যাপক তাণ্ডবের পর আজ সোমবার (২৭ মে) সকালের দিকে কিছুটা বিরতি দিয়ে বেলা ১১টা থেকে আবারও নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা যত গড়িয়েছে ঝড় বৃষ্টির গতিও তত বাড়ছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সাতক্ষীরায় বিধ্বস্ত হয়েছে ১ হাজার ৪৬৮টি কাঁচা ঘরবাড়ি। এরমধ্যে আংশিক নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ১৯২টি এবং সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে ২৭৬টি ঘরবাড়ি। জেলার ৭৮টির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৩টি ইউনিয়নে ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৬ জন মানুষ দুর্যোগে পড়েছেন। এছাড়া ৬০৪ হেক্টর জমির ফসল এবং ২০০ হেক্টর মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার (২৭ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে রিমালের তাণ্ডবে ৪০ হাজার ১৯১ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালীতে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মৃতই ব্যক্তির নাম শওকত মোড়ল (৬৫)। তিনি নাবিদখালী গ্রামের মৃত নারীর মরনের ছেলে।
সুন্দরবন ভিসা শ্যামনগর উপজেলার সামাজিক বন বিভাগ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার গাছপালা উপড়ে গেছে। রিমালের তাণ্ডবে সাতক্ষীরায় কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘূর্ণিঝড় প্রবল বেগে সুন্দরবনে আছড়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় গাছপালা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বন কর্মকর্তারা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সুন্দরবনে জরিপ চালিয়ে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হবে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
অপরদিকে, সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী এখনো ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। জেলাজুড়ে প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। বর্তমানে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ থাকলেও ৬ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ হীন। এ দিকে বিদ্যুৎ না থাকার ফলে উপকূলীয় এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছে না। এজন্য সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে জেলার ৬ লাখ ২৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতের মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। এতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অনেক লাইন বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই জানানো যাচ্ছে না। নিরূপণ করে বলতে পারব কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সাতক্ষীরা বিদ্যুৎ সরবরাহ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সহকারী প্রকৌশলী মতিয়ার রহমান জানান, আমাদের ৫৬ হাজার গ্রাহক। ঘূর্ণিঝড় রিমালে মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় এবং কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়ায় রোববার রাত ১১টার পর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ঝড় থামার পরপরই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। ১১টি ফিডারের মধ্যে আটটি চালু করতে পেরেছি। ৫৬ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৪০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পেরেছি। বাকিদের বিদ্যুৎ সরবরাহে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঝড়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনই বলা হচ্ছে না। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আমরা কাজ করছি।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা অতিক্রম করেছে। রাত ১টায় এখানে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৭২ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় কেটে গিয়ে এখন নিম্নচাপ চলছে। ৩নং সংকেত চলছে। আজ সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন