ঘূর্ণিঝড় রিমাল সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা উপকূলের আঘাত হানবে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলি। রোববার (২৬ মে) দুপুরে এ তথ্য জানান তিনি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সকাল থেকে সাতক্ষীরায় উপকূলবর্তী শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জে হালকা বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা।
এদিকে, উপকূলীয় এলাকার খেয়াঘাটগুলোতে মানুষের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। এ ছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। উপকূলীয় এলাকায় সকাল থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলি জানান, সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। ফলে উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হবে। এ ছাড়া স্বাভাবিক থেকে ৮ থেকে ১০ ফিট নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আতঙ্কে রয়েছে উপকূলবাসী। বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে উপকূলের মানুষ। আগের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে গৃহহারা হয়ে পাউবোর বেড়িবাঁধ অথবা উঁচু কোনো স্থানে টং ঘর বেধে বসবাসকারী লোকেরা ফের বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ রক্ষায় এগিয়ে এসেছে স্থানীয়রা।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পাউবোর বেড়িবাঁধ মেরামতে শনিবার রাত থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে গ্রামবাসী। রাতে আলো জ্বালিয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে মাটির কাজ করছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের ভাঙন রোধে রোববার সকাল থেকে নৌকায় করে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় জিও রোল পাঠানো হচ্ছে।
অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের সরিয়ে নিতে ১৬৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একসঙ্গে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে ফিরে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার সকালে উপকূলের নদ-নদীতে জোয়ার শুরু হয়েছে। শনিবার থেকে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নদী এখন পর্যন্ত উত্তাল রূপ ধারণ করেনি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সকালে ঘোলা ত্রীমোহনী, ঝাপালি, নওয়াবেঁকী, পাখিমারা ও নীলডুমুর খেয়াঘাট এলাকায় মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে।
শামনগরের বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের সাহেব আলী জানান, শনিবার সকালে জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত বেশি হয়েছে। পূর্ব সতর্কতা থাকায় পার্শ্ববর্তী খোলপেটুয়া, মালঞ্চ, আড়পাঙ্গাশিয়া নদীসমূহের জেলেরা শনিবার মাছ ধরতে নামেনি। এ ছাড়া সাগর ও সুন্দরবনে অবস্থানরত জেলেরা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনসহ সকল টহল ফাঁড়িতে অবস্থানরত বনকর্মীদের সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবন ও সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া জেলেদের লোকালয়ে ফিরতে পরামর্শ দিয়ে তাদের উদ্ধারে বনকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বন বিভাগের এ কর্মকর্তা আরও জানান শনিবার সকালের জোয়ারের পানি তার অফিসে যাওয়ার একমাত্র পায়ে চলা রাস্তার উপরে উঠার উপক্রম হয়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্যামনগরকে ঘিরে থাকা উপকূল রক্ষা বাঁধের প্রায় ১২৯ কিলোমিটারের মধ্যে সাত/আটটি পয়েন্টের প্রায় দুই কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে মাটি ফেলে উচ্চতা বৃদ্ধিসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে বাঁধের ভাঙন ও ধস ঠেকানোর কাজ চলছে।
অপরদিকে আশাশুনির ১৫ এর অধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এই মুহূর্তে ৫/৬টি পয়েন্টে কাজ চলছে। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও জিও রোল মজুদ রয়েছে। এখন আমরা ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের ভাঙন পয়েন্টে বেড়িবাঁধে জিও রোলের কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো পয়েন্টে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিবুল আলম বলেন, উপজেলার ১৬৯ সাইক্লোন শেল্টারকে প্রস্তুত করা হয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীকে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় তৈরি থাকার জন্য বলা হয়েছে। শুকনা খাবারসহ নগদ অর্থ মজুদ রাখা হয়েছে। প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। উপকূলের মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারসহ নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা এলাকায় মাইকিং করে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
মন্তব্য করুন