রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০৮:১২ এএম
আপডেট : ২৬ মে ২০২৪, ০৮:৫৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

গোপালভোগে জমেছে আমের হাট, দাম চড়া

হাটে উঠেছে রাজশাহীর গোপালভোগ আম। ছবি : কালবেলা
হাটে উঠেছে রাজশাহীর গোপালভোগ আম। ছবি : কালবেলা

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাটে উঠেছে গোপালভোগ বা রানিপছন্দ আম। শনিবার (২৫ মে) এই জাতের আম কেনা-বেচা শুরু হয়েছে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের হাট রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে। একইসঙ্গে কেনা-বেচা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুটি জাতের আমও।

উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের হাট রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে উঠেছে গোপালভোগ আম। ছবি : কালবেলা

তবে গত মৌসুমের তুলনায় এবার সব আমের দাম বেশি বলেছেন- ক্রেতা-বিক্রেতারা। গত মৌসুমের তুলনায় এবার প্রতি মণ আম ১ হাজার টাকা বেশি দামে কেনা-বেচা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে গুটি জাতের পরে এই প্রথম সুস্বাদু কোনো আম বাজারে উঠেছে। জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে সব গুটি জাতের আমের মধ্যে গোপালভোগ কেনা-বেচা হয়েছে। এই হাটে প্রকারভেদে প্রতিমণ গোপালভোগ আম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। আর গুটি জাতের আম প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।

দুপুরে হাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার চরঘাট, বাঘা, মোহনপুর, দুর্গাপুর উপজেলার আম কেনা-বেচা হচ্ছে বানেশ্বর হাটে। হাটে চাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাটারিচালিত ভ্যান গাড়ি ও ইঞ্জিনচালিত নসিমন-করিমনে করে আম নিয়ে আসছেন। এসব গাড়িতে ৩০ থেকে ৬০টি ক্যারেট (আম রাখার ঝুড়ি) আম থাকছে। সড়কের উপরে বসা আমের হাটে কেনা-বেচা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। হাটে শুরু পাকা আমই নয়, আচার তৈরির জন্য অনেক ব্যবসায়ী ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা কিনছেন কাঁচা আমও। তবে আচার তৈরির এসব আম প্রতিমণ কেনা-বেচা হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে ।

৩৫ টা গাছ নিয়ে আব্দুল হান্নানের গোপালভোগ আমের বাগাম। তিনি ৪টি গাছে আম পেড়ে বানেশ্বর হাটে বিক্রি করতে এসেছেন। আব্দুল হান্নান বলেন, গাছে পাকা আম দেখা দিয়েছে। রাতে পাকা আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। আজ প্রথম গোপালভোগ জামের আম পাড়া শুরু হয়েছে। চারটি গাছের আম হয়েছে ৭৩ ক্যারেট।

বাজারে আমের দাম কেমন মনে হচ্ছে এমন কথার উত্তরে আব্দুল হান্নান বলেন, গতবছরের তুলনায় এবছর আমের দাম ভালো আছে। শেষ পর্যন্ত এমন দাম থাকলে ভালো টাকা পাবেন বলে আশা করেন তিনি। এ বছর গাছে আম কম। তাই চাহিদা বেশি। অনেক ব্যবসায়ী গিয়ে বাগান চুক্তি আম কিনতে চাচ্ছে, দেয়নি। গত বছর মৌসুমের শুরুর এই সময়ে আমের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ। কিন্তু এ বছর প্রতি মণে এক হাজার টাকা বেশি।

বানেশ্বর হাটের আম বিক্রেতা রইসুল ইসলাম বলেন, আজকেই প্রথম হাটে গোপালভোগ বা রানিপছন্দ আম বিক্রি হচ্ছে। এর আগে গুটি জাতের আম বিক্রি হয়েছে। তবে গুটি জাতের আমের চাহিদা কম। যারা কিনেছেন তারা আচার করার জন্য কিনেছেন। তবে এখন গোপালভোগ আম কেনা-বেচা হচ্ছে, সেই আম মানুষ পাকা অবস্থায় খাবে। এখন আস্তে আস্তে সব আম পেকে যাবে।

চাকরির সুবাদে রাজশাহীতে গত বুধবার এসেছিলে লক্ষ্মীপুর জেলার সাইফুল ইসলাম। বাড়ি ফেরার পথে রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে কার থামিয়ে আম কিনতে দেখা গেছে তাকে। এসময় তিনি বলেন, রাজশাহীর আমের সুনাম দেশব্যাপী আছে। রাজশাহীতে এসেই আম খেয়েছি। তবে সেই আম ততটা তার ভালো লাগেনি। তাই বাড়ি ফেরার পথে বানেশ্বর হাট থেকে দুই মণ গোপালভোগ আম কিনেছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, বুধবার যে আম খেয়েছিলাম তার থেকে হাটে খাওয়া গোপালভোগ আমের স্বাদ ভাল লেগেছে। এই আম মিষ্টি ভালো। কয়েকটা পাকা ছাড়া সব আম কাঁচা কিনেছি। তার থেকে প্রতিমণ আমের দাম নিয়েছে ২৮০০ টাকা। তিনি বলেন, রাজশাহীতে আসার আগে পরিবারের সদস্যরা তাকে আম নিয়ে যেতে বলেছিল। তাই আরও বেশি করে নিয়ে যেতে হচ্ছে আম।

আড়তে আম বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, হাটে আম বিক্রি হচ্ছে ঠিক। তবে খুচরা ক্রেতা কম। বেশিরভাগ আম আড়তদাররা কিনে নিচ্ছেন। তারা একসাথে চাষি ও ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি করে আম কিনে ট্রাক ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠায়। তবে সড়কের পাশে খুচরাভাবে আম কেনা-বেচা হচ্ছে। হাটে প্রতিদিন আম কেনা-বেচা হচ্ছে। তারমধ্যে এখন পর্যন্ত হাটের দিন (শনিবার-মঙ্গলবার) বেশি আম কেনা-বেচা হয়।

ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এ বছর লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি গাছ থেকে নামানো যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন আম্রপালি এবং ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।

বানেশ্বর আম হাটের ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, রাজশাহীর সবচেয়ে খেতে ভাল এমন আমগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া। হাটে গোপালভোগ আম আশা শুরু হয়েছে লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া আসতে বাকি। হাটে আমের আমদানি বেড়েছে। এবার তুলনামূলক আমের ফলন কম। তবে ফলন কম হলেও আমের দাম ভালো আছে। গত বছর মৌসুমের শুরুতে গোপালভোগ আমের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ। কিন্তু এ বছর একই সময় প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়।

প্রসঙ্গত, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ টন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তিস্তার পানির ব্যবস্থাপনায় পাশে থাকবে মোদি জানালেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেবে সেভ দ্য চিলড্রেন

চাঁদ জয়ের প্রস্তুতি নিতে শিশুদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

৬ষ্ঠ দিনেও আন্দোলনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

টিউলিপ কী মন্ত্রী হচ্ছেন?

বন্যা নিয়ে দুঃসংবাদ দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর

জিম্মিদের মুক্তিতে মার্কিন প্রস্তাবে সম্মত ফিলিস্তিনিরা

নিজ এলাকায় চিকিৎসা নিতে এমপিদের অনুরোধ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

দেশের প্রথম আইন বিশ্ববিদ্যালয় হবে শিবচরে : আইনমন্ত্রী

তাঁতীবাজার সড়ক অবরোধ / গান-কবিতায় বেগবান হচ্ছে জবি শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন

১০

প্রথম কার্য দিবসে কী করবেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী?

১১

এসিআইয়ে অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকরি, আছে বিদেশ ভ্রমণের সুবিধা

১২

বাবাকে খুঁজে পেতে নড়াইলের তরুণী পাবনায়

১৩

এবার বেনজীরের ডুপ্লেক্স বাড়ি জব্দ

১৪

লিপি মনোয়ারকে বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের স্বর্ণপদক প্রদান

১৫

নৌকাডুবে প্রাণ গেল দুই বন্ধুর

১৬

১৩০০ বছর আগের ঐতিহাসিক ‘জাদুর’ তলোয়ার উধাও!

১৭

সুপার স্পেশালাইজডের বিদ্যমান আইনে নতুন সংযোজন প্রয়োজন : বিএসএমএমইউ উপাচার্য

১৮

ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে ঢাবিতে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু

১৯

এশিয়া কাপের আম্পায়ারিং প্যানেলে জেসি

২০
X