শরীয়তপুরের জাজিরায় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ পেয়ে ভিডিও ধারণের সময় হামলার শিকার হয়েছেন ছয় সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন।
মঙ্গলবার (২১ মে) বেলা ১১টার দিকে জাজিরা সেনেরচর ফরাজী দারুস সুন্নাহ নুরানি হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা কেন্দ্রে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
জাজিরা উপজেলায় মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইদ্রিস ফরাজীর কর্মী-সমর্থকরা এ হামলা চালায়। এ সময় স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পুলিশ, স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। এই নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এস এম আমিনুল ইসলাম রতন ও মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীসহ পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। জাজিরা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি পলাশ খান, সহসভাপতি বরকত মোল্লা, কালবেলার ভেদরগঞ্জ প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়, সাংবাদিক সানজিদ মাহমুদ সুজন, রুহুল আমিনসহ জেলার সাংবাদিকরা জাজিরা ফরাজী দারুস সুন্নাহ নুরানি হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা কেন্দ্রে সংবাদ সংগ্রহে যান। তখন মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীর (মোটরসাইকেল প্রতীক) কর্মী-সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রের কক্ষের কাপড় সরিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দিচ্ছিলেন। এ সময় সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ করতে গেলে ইদ্রিস ফরাজীর সমর্থক বিপ্লবসহ ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মী-সমর্থকরা সাংবাদিক পলাশ, বরকত, হৃদয়, সুজন, রুহুল, নুরুল আমিনদের ওপর হামলা চালায়। এসময় ৬ সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হন।
হামলায় আহত সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় বলেন, ভোটকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ জানতে পারি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা। পরে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ভিডিও ধারণ করতে গেলে সবুজ শার্ট গায়ে বিপ্লব খা ও মোটরসাইকেলের ব্যাচ পরা এক যুবক আমাদের বাধা দেয় এবং মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে আমার সঙ্গে থাকা অন্য সহকর্মীরা আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর ভাই ইমন ফরাজীর নেতৃত্বে অনেক লোক এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের থেকে সাহায্য চাইলে তারাও আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
আহত আরেক সাংবাদিক বরকত মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ওপর যখন হামলা চালানো হয়, আমরা প্রশাসনের কাছে হাতজোড় করে বাঁচাতে অনুরোধ করেছিলাম, তারা তখন সরে যায়। কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখলেই হামলাকারীরা মারধর শুরু করে।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, এখানে বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া একজনের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে, তার অবস্থার উন্নতি না হলে ঢাকায় পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নি কর্মকর্তা ও জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, আমরা খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। যারা আহত হয়েছেন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন