ভ্যানচালক বাবার মেধাবী সন্তান আরিফ মিয়া। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছিলেন জিপিএ-৫। স্বপ্ন দেখেছিলেন ডাক্তার হওয়ার। একদিন বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর কোনোদিন পূরণ হবে না আরিফের। মরণব্যাধি ব্লাড ক্যানসারের কাছে হেরে গিয়ে অধরাই রয়ে গেল তার স্বপ্ন।
সোমবার (২০ মে) সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।
আরিফ মিয়া রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের একমাত্র ছেলে। তোফাজ্জল হোসেন ভ্যান চালিয়ে ও ঘাস বিক্রি করে সন্তানদের পড়াশোনা করিয়েছেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। বাবার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে ছেলে একদিন ডাক্তার হবে। শেষ বয়সে তাকে আর ভ্যান চালাতে হবে না। কিন্তু একমাত্র সন্তানের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নেরও যেন মৃত্যু হয়েছে। ঋণ করে, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশিদের সাহায্য সহযোগিতা নিয়েও শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারলেন না একমাত্র ছেলেকে।
আরিফকে নিয়ে কালবেলায় গত ২১ এপ্রিল ‘ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা মেধাবী আরিফ মৃত্যু পথযাত্রী’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের এক মাসের মাথায় মারা গেলেন তিনি।
সোমবার রাতে আরিফদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বাড়িজুড়ে চলছে শোকের মাতম। আরিফের মা মর্জিনা বেগম ছেলে হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বোন তাহমিনা বেগমের কান্না থামছেই না।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ৮/৯ মাস আগে আরিফ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম কামরুজ্জামানের কাছে যান। সে সময় পরীক্ষা করার পর তার থ্যালাসেমিয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। কয়েকমাস চিকিৎসা করার পর অবস্থার উন্নতি না হলে ডাক্তারের পরামর্শে ঢাকায় গিয়ে টেস্ট করালে তার ব্লাড ক্যানসার শনাক্ত হয়। সোমবার সন্ধ্যায় মারা যান তিনি।
আরিফ গত বছর চন্ডিপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। পরে পীরগাছা সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
মন্তব্য করুন