নওগাঁয় সুমি (৩০) খাতুন নামে এক প্রসূতি নারীর পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দিয়েছিলেন এক চিকিৎসক। ঘটনার পর অসুস্থ হওয়া ওই নারীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে পুনরায় অপারেশনের পর পেটের ভেতর থেকে বের করা হয় রক্ত পরিষ্কার করা গজ কাপড়।
রোববার (১৯ মে) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী উজ্জল হোসেন। বর্তমানে সুমিকে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আর সদ্যোজাত বাচ্চাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার (১৫ মে) সকালে শহরের একতা ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। সুমি খাতুন জেলার আত্রাই উপজেলার বান্দাইখাড়া এলাকার উজ্জল হোসেনের স্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ মে প্রসবব্যথা শুরু হলে শহরের হাসপাতাল রোড এলাকায় অবস্থিত একতা ক্লিনিকে নেওয়া হয় ওই প্রসূতি নারীকে। সেখানে ওই দিনই সিজার করেন প্রসূতি বিদ্যা ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার তানিয়া রহমান তনি।
সরেজমিনে গিয়ে ক্লিনিকের রেজিস্ট্রার খাতা দেখেও সত্যতা পাওয়া যায়। সিজারের জন্য জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া (জিএ) প্রয়োগ করেন ডাক্তার তানিয়ার স্বামী নওগাঁ সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডাক্তার আদনান ফারুক। সিজারের পরই ওই নারী তার পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডাক্তার তানিয়া ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রউফকে দিয়ে দ্রুত রোগীর পেটে সেলাই করিয়ে নেয়। তার পর বুধবার রাত ১০টার দিকে কৌশলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামকে) হাসপাতালে নেওয়ার পর রাতেই আল্ট্রাস্নোগ্রাফিতে জানা যায় তার পেটে বাড়তি কিছু একটা জিনিস রয়েছে। আর সেটির জন্য তাকে বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের সম্মতিতে ফের অপারেশন করার পর পেট থেকে গজ পাওয়া যায়। ভুল অপারেশন ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সংকটাপন্ন অবস্থায় বর্তমানে তাকে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী উজ্জল হোসেন বলেন, ডাক্তার তানিয়া সিজার করার পর পেটে গজ রেখেছিল। আবার হাসপাতালের মার্কেটিং অফিসারকে দিয়ে কীভাবে পেটে সেলাই করিয়ে নেয়। তিনি তো এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছিল না। কৌশলে রাজশাহীতে রেফার করে দেয় তারা। আমার স্ত্রীর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। আমরা এর বিচার চাই। ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জানতে চাইলে একতা ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, ডাক্তার তানিয়া আমাকে যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিল সেভাবেই আমি সেলাই করেছি। আপনি কী এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কি না বা এটা আপনার কাজ কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে ডা. তানিয়া রহমান তনি বলেন, চেম্বারে রোগী দেখছি, ৫ মিনিট পর আপনাকে কল ব্যাক করছি বলে প্রতিবেদকের মোবাইল নম্বর ব্লকলিস্টে রাখেন। পরে অন্য আরেকটি নম্বর থেকে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
ডা. তানিয়ার স্বামী ডা. আদনান ফারুককেও একাধিকবার ফোন করা হলে তিনিও ফোনকল রিসিভ করেননি।
ক্লিনিক মালিক মাসুদুর আলম (আগা) জানান, ঘটনার জন্য আমরা দায়ী নই। যেসব ডাক্তার এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার ক্লিনিকে সিজার করার সময় এমন ঘটনা ঘটেছে এবং ডাক্তারকে আপনি নিয়ে এসেছেন, তাহলে আপনার এখন করণীয় কী -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন রোগীর জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিই-বা করতে পারি।
সোমবার দুপুরের দিকে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আপনার কাছে থেকে অবগত হলাম। আমরা খোঁজ নিয়ে অবশ্যই দেখব। আর রোগীর অভিভাবক কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।
মন্তব্য করুন