নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে কিশোরীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় চার যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা ধর্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায় স্বীকার করেছে বলেও জানায় র্যাব।
সোমবার (২০ মে) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, আড়াইহাজার উপজেলার বাসিন্দা মো. আব্দুল্লাহ (২৪), চাঁন মিয়া (২৮), মো. আয়নাল (২৫) ও নরসিংদি মাধবদী এলাকার সহযোগী মো. মতিন (৩৫)।
এর আগে এ ঘটনায় ধর্ষিতা কিশোরী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আড়াইহাজার থানায় অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা গণধর্ষণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র এবং চক্রের মূলহোতা আব্দুল্লাহ। এই চক্রে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে তারা ১-২ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল বলে জানা যায়।
অধিনায়ক জানান, বুধবার (১৫ মে) রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে গণধর্ষণের শিকার ১৭ বছরের কিশোরীর বাড়িতে যায়। এ সময় আব্দুল্লাহ ও মতিন জানালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। কিশোরী ও তার মাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। পরবর্তীতে ঘরের দরজা খুলে দিলে চাঁন মিয়া ও আয়নালসহ অন্যান্য সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্রসহ ঘরে প্রবেশ করে। ভয়ভীতি দেখিয়ে কিশোরীর মাসহ ঘরে উপস্থিত সবার হাত, পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর তারা ঘরের ভেতর মূল্যবান জিনিসপত্র না পেয়ে ক্ষোভে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কিশোরীকে তাদের একটি ফাঁকা ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে কিশোরীর মুখ ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে জোরপূর্বক পালাক্রমে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরে কিশোরীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রেখে এই ঘটনা সম্পর্কে কাউকে জানালে কিশোরী ও তার পরিবারকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
র্যাবের অধিনায়ক আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহ ডাকাত চক্রের মূলহোতা। সে পূর্বে একটি স্পিনিং মিলে চাকরির সময় থেকে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ডাকাত চক্রটি গড়ে তুলে। সে ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভূলতা-গাউসিয়া এলাকায় বাসের হেলপার ও রিকশা চালাত।
তিনি জানান, আব্দুল্লাহর অন্যতম সহযোগী মতিন ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সে ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে সিএনজি চালাত। সিএনজি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির জন্য টার্গেট নির্ধারণ করে ডাকাতির পরিকল্পনা আব্দুল্লাহকে প্রদান করত।
এ ছাড়াও সে সিএনজি দিয়ে ডাকাতির পূর্বে চক্রের অন্যান্য সদস্যকে ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যেত এবং ডাকাতি শেষে চক্রের সদস্যদের সুবিধাজনক স্থানে দ্রুত পৌঁছে দিত। তার বিরুদ্ধে নরসিংদীর মাধবদী থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে। চাঁন মিয়া ও আয়নাল ডাকাত চক্রের অন্যতম সদস্য। তারা ডাকাতি পেশাকে আড়াল করার জন্য ছদ্মবেশে যথাক্রমে বাস ও সিএনজি চালাত।
তারা আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করত। চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও চুরি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেছে এবং আয়নালের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ সংক্রান্ত ১টি মামলা রয়েছে।
মন্তব্য করুন