একদিকে সাগর, অন্যদিকে সবুজ-প্রাচ্যের রানি খ্যাত চট্টগ্রামের দৃশ্যটা এমনই। তবে অযত্ম-অবহেলাসহ নানা কারণে অনেকটা জৌলুস হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি। এবার এমন দৃশ্যপট পাল্টে চট্টগ্রামে সমুদ্র সৈকতগুলোকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ‘চট্টগ্রাম বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি’। চট্টগ্রামের পতেঙ্গাকে সাজানো হবে দেশের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের আদলে। তাছাড়া নগরের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা পারকি সমুদ্র সৈকতকে দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে নতুন ১৬টি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই আওতায় বিচ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পর্যটকদের সুবিধা সংবলিত অবকাঠামো নির্মাণ, পর্যাপ্ত টয়লেট, শৌচাগার, চেঞ্জিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ করা হবে।
অন্যান্য বিনোদন স্পটের মতোই এবার চট্টগ্রামের সমুদ্র সৈকতগুলো দৃষ্টিনন্দন করতে এ সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একাধিক বৈঠকে পতেঙ্গা ও পারকি বিচের সৌন্দর্য বাড়ানোর বিষয়টি জোরালো আলোচনায় এসেছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, এরই মধ্যে ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ছাদ খোলা বাসও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামে মানুষের জন্য পর্যটন সুবিধা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এবার আমরা চট্টগ্রামের সি-বিচগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করতে চায়। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা চলছে। আশা করছি অল্প সময়ের জন্য চট্টগ্রামবাসীকে দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত উপহার দিতে পারব।
এরই মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পরিচালিত ছাদ খোলা বাস, ডিসি ফ্লাওয়ার পার্কসহ বিভিন্ন উদ্যোগ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার পারকি ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘিরে জেলা প্রশাসন যে উদ্বেগ নিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে পর্যটন ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির নির্ভরশীল একটি সূত্র জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও পারকি বিচকে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে এর মধ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরুর তাগাদা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য হলো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আদলে গড়ে তোলা।
সিদ্ধান্তগুলো হলো, বিচ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পর্যটকদের সুবিধা সম্বলিত অবকাঠামো নির্মাণ করা, বিচ সংশ্লিষ্ট এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনয়ন, বিচ সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থায়ী/অস্থায়ী অফিস স্থাপন, সমুদ্র সৈকতের জন্য মাস্টার প্লান তৈরি করা, মাস্টার প্লান বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত সৈকতের দোকানসমূহ শুশৃংখল ও পুনর্বাসন করা, বিচ এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ইউনিফর্মধারী সেবক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বীচ সংশ্লিষ্ট এলাকায় যথাযথ সেবা প্রদানের নিমিত্ত গাড়ি পার্কিং, বিভিন্ন সেবা গুলোকে জোন ভিত্তিতে ভাগ করা, বীচের গেজেট ভূক্ত এলাকা চিহ্নিত করে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও অবৈধ দখলদারদের পুনর্বাসন পূর্বক উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, বিচ সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ব্যবস্থা নেওয়া, পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধাদির ব্যবস্থাসহ সৈকতের সার্বিক উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনাসহ বিদেশি পর্যটকদের জন্য সৈকতে এক্সক্লুসিভ জোন নির্ধারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, পর্যাপ্ত টয়লেট, শৌচাগার, চেঞ্জিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ, বিচ এলাকায় ফটোগ্রাফারসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারীদের সংখ্যা নির্দিষ্টকরণ, সাময়িক পরিচয়পত্র প্রদান, সেবা মূল্য নির্ধারণ এবং এক্ষেত্রে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা, বীচ এলাকায় খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বাজারে মূল্যের সঙ্গে মিল রেখে বিক্রিয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উন্নয়নের বিষয়ে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়, বিচ এলাকায় পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের শেড-অফিস নির্মাণ।
মন্তব্য করুন