লন্ডন প্রবাসী স্বজনদের সম্পদ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নিজেদের কবজায় রেখে তা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজমুল হক সেলিম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
সেলিমের প্রবাস ফেরত চাচারা নিজেদের সম্পদ ফেরত চাইলে তাদের দেওয়া হচ্ছে নানা ধরণের হুমকি-ধামকি ও মামলা। সম্পদ ফেরত চেয়ে এখন তাদের জীবন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, কামারচাক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজমুল হক সেলিমের তিন চাচা লন্ডন প্রবাসী। তারা হলেন- মো. ফয়জুল হক, আব্দুল হক ও মুজিবুল হক। সেলিমের বাবা সামছুল হক পরিবারের বড় সন্তান ছিলেন। তিনিই সব সম্পদ দেখাশোনা করতেন। সামছুল হকের মৃত্যুর পর এই পরিবারের সব সম্পদ সেলিম ও তার ভাইয়ের দখলে রয়েছে। এখন সেলিমের লন্ডন প্রবাসী চাচারা দেশে ফিরে সম্পদের ভাগবণ্টন দাবি করলে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। নিজেদের কবজায় রাখা সম্পদ বণ্টন করে দিতে চাচ্ছেন না সেলিম ও তার ভাই।
এখন তাদের সম্পত্তির সুষ্ঠু বণ্টনে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় উভয়ের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে গত ১৩ মে রাতে কামারচাক ইউনিয়নের মেলাগর গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ এলাকার শতাধিক লোকজন নিয়ে উঠান বৈঠক হয়। কিন্তু ওই বৈঠকেও সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি।
ভুক্তভোগী প্রবাসী তিন ভাই মো. ফয়জুল হক, আব্দুল হক ও মুজিবুল হক জানান, আমরা সবাই বিদেশে থাকতাম। আমাদের বড় ভাই মৃত সামছুল হক দেশের সবকিছু দেখাশোনা করতেন। উনি মারা যাওয়ার পর আমরা দেশে আসি। কিন্তু উনার ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান সেলিমসহ কেউই আমাদের সম্পদ ভাগ করে দিচ্ছেন না। তারা তাদের কবজায় সম্পদ রেখে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের বিষয় সম্পত্তিসহ অন্যান্য বিষয়ে পারিবারিক বিরোধ চলছে।
সর্বশেষ রবিরবাজারস্থ ‘দি নিউ জালালাবাদ হোটেল অ্যান্ড কনফেকশনারী’ নামীয় প্রতিষ্ঠান মো. নজমুল হক সেলিম ও তার ভাই মো. মঈনুল হকসহ তাদের সহযোগীরা দখলে নিতে চাইলে তিনি বাধা সৃষ্টি করেন। এ সময় তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়।
ভুক্তভোগী লন্ডন প্রবাসী ৩ ভাইসহ স্থানীয়রা জানান- শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, রাজনগর ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের নিজ ভূমি ও ভূমিতে স্থাপনা রয়েছে। কিন্তু নজমুল হক সেলিম ও তার ভাইয়েরা তা আত্মসাৎ করার ষড়যন্ত করছেন। চাচারা যাতে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে না আসতে পারেন এই জন্য একাধিক ষড়যন্ত্রমূলক মামলাও দেওয়া হয়েছে। সেলিমের ভাই মো. মঈনুল হক বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতে লন্ডন প্রবাসী চাচা মো. ফয়জুল হক ও মুজিবুল হকসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন।
লন্ডন প্রবাসী মো. ফয়জুল হক কালবেলাকে বলেন, আমরা চার ভাইয়ের মধ্যে তিনভাই লন্ডনে থাকি। আমাদের বড়ভাই আমাদের সকল সম্পদ দেখাশোনা করেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর ওনার ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিমও তার ভাই আমাদের সম্পদ দেখাশোনা করত। আমরা এখন চিন্তা করলাম একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আসার জন্য। আমাদের মৌরসী সম্পদ ভাগ করব। কিন্তু সেলিম ও তার ভাই কোনো সহযোগিতা করছেন না। বরং আমাদের নানাভাবে হুমকিধমকি দিয়ে আসছে। আমাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। আমরা লন্ডন প্রবাসী বলে আমাদের সঙ্গে এ রকম অন্যায় করা হবে। আমরা এর বিচার চাই। আমাদের মৌরসী সম্পদের অধিকার চাই।
আব্দুল হক বলেন, আমি পঞ্চাশ বছর ধরে লন্ডনে আছি। আমার ভাতিজা সেলিমের সঙ্গে আমাদের জমিজমা ভাগবাটোয়ারা করতে গেলে তিনি আমাদের পাত্তা দেন না। বরং মামলা ও ভয়ভীতি দেখান।
এ বিষয়ে কামারচাক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজমুল হক সেলিম মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, আমি এ বিষয়ে এখন কথা বলতে পারব না। রাতে একসময় কল দিয়েন; পরে কথা বলব।
মন্তব্য করুন