চলতি বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শারমিন আক্তার মনির। মেয়ের ভবিষ্যৎ শিক্ষার খরচ কীভাবে যোগাবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার পরিবার।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ি স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখা থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে শারমিন আক্তার মনি। বাবা বদরুল ইসলাম মানসিক প্রতিবন্ধী। মা ছেড়ে চলে গেছে চার বছর।
খুব ছোট বয়স থেকেই শারমিন চাচার বাড়িতে আশ্রিত। ছোট চাচা নাজমুল ইসলাম শুটিবাড়ি বাজারে ছোট্ট একটি পান-সুপারির দোকান দিয়ে কোনোমতে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন। নাজমুল আলমেরও দুই মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। তার দুই মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখাপড়া করে। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অভাব অনটনে কোনোমতে সংসার চলে তাদের।
শারমিন জানান, প্রাইভেট পড়িয়ে সেই টাকায় নিজের পড়াশোনা চালায় সে। এখন ভালো কোনো কলেজে ভর্তি এবং পড়ালেখায় প্রয়োজনীয় টাকা তার ছোট চাচা ও বৃদ্ধ দাদীর পক্ষে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য ভবিষ্যতের পড়াশোনা অনিশ্চিত তার।
শারমিন আরও জানান, টাকার অভাবে আমি কি কলেজে ভর্তি হতে পারব না? গরিব হয়ে জন্মেছি বলেই হয়তো টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী। মা থেকেও নেই। ছোট চাচা আর দাদীমা লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। এছাড়া সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বইয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করতে পেরেছি। কিন্ত উচ্চশিক্ষা লাভে অর্থের যোগান কোথা থেকে আসবে কীভাবে আসবে, এ চিন্তা সারাক্ষণ ভাবিয়ে তুলছে আমাকে।
চাচা নাজমুল ইসলাম বলেন, অভাব-অনটনের মধ্যেও আমার ভাতিজি ভালো ফলাফল করেছে। সে আরও পড়তে চায়। সাতজনের সংসার ছোট পানের দোকান করে কোনোভাবে চালাচ্ছি। কিন্তু ভাতিজির কলেজে পড়ালেখার খরচ কোথায় পাব? আমারও সন্তান আছে, তারাও লেখাপড়া করে।
প্রতিবেশী সোহেল জানান, শারমিন মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় পড়াশোনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। শারমিন এসএসসিতে ভালো ফলাফলও করেছে। কিন্তু এখন শারমিনকে ভালো কলেজে ভর্তি করতে ও কলেজের পড়ালেখা চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেটা যোগাড় করা তাদের পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
গয়াবাড়ি স্কুল এন্ড কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন জানান, শারমিন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও ভালো রেজাল্ট করে এখন অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার।
এ প্রসঙ্গে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন