‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে থেকে প্রচণ্ড ভয়ে আমাদের দিন কেটেছে। আর সবচেয়ে বেশি ভয় হয়েছে মাকে নিয়ে। কারণ বাবাকে হারানোর এক মাস পরই আমি বিপদে পড়েছি। এটি কীভাবে মা সহ্য করছেন তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা হয়েছিল। এখন আমি মায়ের কোলে ফিরেছি। এ আনন্দ সকল কষ্ট, সকল ভয় জয় করে নিয়েছে।’
জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান বুধবার (১৫ মে) সকালে কথাগুলো কালবেলাকে জানান। এর আগে মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ে ২৩ নাবিক বহনকারী জাহাজ।
আইয়ুব লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিনন বেপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে।
ক্যাডেট আইয়ুব আরও বলেন, আক্রমণের পর জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করতে বলে দস্যুরা। এরপর তারা আমাদেরকে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যায়। সোমালিয়ায় যেতে প্রায় আড়াই দিন লেগেছে। প্রথম কয়েকদিন আমাদের সবাইকে একটি রুমে আটকে রাখে। সবাইকে একই বাথরুম ব্যবহার করতে হয়েছে। দস্যুরাও আমাদের বাথরুম ব্যবহার করেছে। প্রথম কয়েকদিন তারা আমাদের খাবার খেয়েছেন। সোমালিয়ায় পৌঁছানোর পর তারা নিজেদের খাবার সংগ্রহ করে।
তিনি আরও বলেন, ঈদের দিন নামাজ পড়তে পারলেও আনন্দ ছিল না। কারণ বন্দিদশা থেকে কবে মুক্ত হব, তা নিয়েই দিন গুনতে হয়েছে আমাদের। একজন দোভাষির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, জলদস্যুরা জাহাজ মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে। মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজ মালিকদের সঙ্গে দস্যুদের সমঝোতা হয়েছে। মুক্তিপণ দিলেই নাবিকরা মুক্তি পাবে। ঈদুল ফিতরের ২ থেকে ৩ দিন পর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মুক্তিপণের ডলারের ব্যাগ জাহাজে ফেলা হয়। এরপর টাকা নিয়ে ভাগ হয়ে যায় জলদস্যুরা। তিন ভাগে জাহাজ ছাড়ে দস্যু বাহিনী। চট্টগ্রাম বন্দরে এসে আত্মীয়-স্বজনদের দেখে স্বস্তি ফেরে। যেই ঈদ আমরা আতঙ্কে কাটিয়েছি, পরিবার-স্বজনদের পেয়ে সেই ঈদ আনন্দ আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে।
আইয়ুবের বড় ভাই ওমর ফারুক রাজু বলেন, দস্যুদের আক্রমণের প্রায় এক মাস আগেই বাবা মারা যান। সেই শোক না কাটতেই আইয়ুবসহ ২৩ নাবিক সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এতে পুরো পরিবারের ওপর অমাবশ্যার অন্ধকার নেমে আসে। তার ফিরে আসা সবার জন্য আনন্দের।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এ সময় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। এদিন বিকেলে জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। জাহাজে লক্ষ্মীপুরের আইয়ুব খানসহ মোট ২৩ জন নাবিক রয়েছেন।
মন্তব্য করুন