জালালাবাদ গ্যাসের সংযোগের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া ১.৩৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কিছু দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। ১ যুগ পার হয়ে গেলেও এর সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন মাধবপুরের একটি জনসভায় জলালাবাদ গ্যাসের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বক্তব্য দিলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ওই টাকা পেট্রোবাংলার তথা জালালাবাদ গ্যাসের পেটে, না কোনো নেতার পেটে রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। তার এলাকায় কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। তিনি দ্রুত জনগণের টাকা জনগণের হাতে ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানান।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়ন ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের ২০১০ সালে দেশের স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান (বাদশা গ্রুপ, আরএকে গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল) তাদের নির্মাণকাজ শুরু করে। এমতাবস্থায় বাঘাসুরা ও নোয়াপাড়া ও জগদীশপুর ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় লোকজন জালালাবাদ গ্যাস থেকে আবাসিক সংযোগ নেওয়ার জন্য রিয়াজনগর, মানিকপুর, সুন্দরপুর, হরিতলা, ফতেহপুর, কালিকাপুর গ্রামের স্থানীয় জনতা গণদাবি বাস্তবায়ন পরিষদ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য আন্দোলনের ডাক দেয়। এ সময় বিভিন্ন কোম্পানির লাইনে গ্যাসে দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয়, উক্ত এলাকায় গ্যাস সংযোগ দিতে যে টাকা খরচ হবে তা বিভিন্ন কোম্পানি দেবে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে মোট ১.৩৩ কোটি টাকা তোলা হয়। পরে তা উক্ত এলাকায় আবাসিক সংযোগের জামানত হিসেবে শাহজিবাজার জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড বরাবরে পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়। এর কিছু দিন পর সরকার ২০১০ সালের ১৩ জুলাই আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকে আজ অবধি গ্যাস সংযোগের বিষয়টি ধামাচাপা থাকে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শামছুল আলম জানান, যেহেতু টাকা পে অর্ডারের মাধ্যমে জালালাবাদ গ্যাসকে পেমেন্ট করা হয়েছে তাই এটি অস্বীকার করারও সুযোগ নাই। আবার এ টাকা কেউ একা তোলার মতো কোনো সুযোগ নাই।
গ্যাসলাইন পেতে স্থানীয়দের নিয়ে গড়ে ওঠা গণদাবি বাস্তবায়ন পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক সাইদুর রহমান তালুকদার জানান, আইন করে আবাসিক লাইন বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা গ্যাসের লাইন পাচ্ছি না। আমাদের এলাকার ৮৫ লাখ টাকা এরা ফেরত দিচ্ছে না। আমরা সংযোগ না পেলে উচ্চ আদালতে যাব।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের শাহজীবাজারের আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক কার্যালয় ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ জানান, সব টাকা আমাদের ফান্ডে জমা রয়েছে। আত্মসাৎ করার প্রশ্নই আসে না। গ্রাহকরা বিধি মোতাবেক আবেদন করলে সেই টাকা ফেরত পাবে।
তবে এক যুগ ধরে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কি না- এ প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির হবিগঞ্জ এলাকার উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রুহুল করিম চৌধুরী বলেন, পেট্রোবাংলা তথা জালালাবাদ গ্যাস নিয়ে আত্মসাতের ব্যাপারে এমপি মহোদয়ের বক্তব্যটি সত্য নয়। গ্রাহকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের কাছে আসলে সে টাকা ফেরত দিতে আমরা ব্যবস্থা নিব। অন্যান্য এলাকার অনেক গ্রাহককে আমরা টাকা ফেরত দিয়েছি। সরকারিভাবে গ্যাসের আবাসিক লাইন বিতরণ বন্ধ রয়েছে।
মন্তব্য করুন