চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করার পর সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারাগারে ফেরার জন্য তিনি প্রিজন ভ্যানে উঠতে অস্বীকৃতি জানান। পরে অবশ্য তাকে ফেনী কারাগারে পাঠানো হয়। এদিন মিতু হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা আর হয়নি।
সোমবার (১৩ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে এ ঘটনা ঘটেছে।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী নেছার আহমেদ জানান, মিতু হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বাবুল আক্তারকে সকাল ১০টার দিকে ফেনী কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বাবুল আক্তারকে আদালত কক্ষে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত বেঞ্চে বসানো হয়। তখন অন্য মামলার কার্যক্রম চলছিল।
আদালত কক্ষেই একপর্যায়ে অসুস্থবোধ করতে থাকেন বাবুল আক্তার। তখন তাকে বেঞ্চে শোয়ানো হয়। সেখানে পুলিশ ও স্বজনরা তাকে প্রাথমিক সেবা দেন। কিছুক্ষণ পর তিনি সুস্থবোধ করতে থাকেন।
নেছার আহমেদ বলেন, ‘সোমবার সাক্ষ্যগ্রহণ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সময়ের আবেদন করেছেন। আদালত ১৫ মে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন। মামলার কার্যক্রম শুরুর আগেই আসামি বাবুল আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাক্ষ্যগ্রহণ না হওয়ায় তাকে যখন কারাগারে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল পুলিশ, তিনি প্রিজন ভ্যানে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি মাইক্রোবাসে করে তাকে কারাগারে নেওয়ার দাবি করেন। পরে তাকে প্রিজন ভ্যানে করে ফেনী কারাগারে নেওয়া হয়েছে।’
নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বাবুল আক্তার নাকি দুই-তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। এজন্য তিনি আদালতে আনার পর থেকে অসুস্থবোধ করছিলেন। ওনি নিজেই পুলিশকে বলেছেন, নাপা খাওয়ালে তিনি সুস্থবোধ করবেন। কিন্তু সেটা তো আমরা পারি না। আমরা বিষয়টি আদালতকে অবহিত করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষকে জানাই। আমাদের এখতিয়ার এটুকুই। ওনাকে ফেনী কারাগার থেকে আনা হয়েছিল। পরে শুনেছি, আবার ফেনী কারাগারে নেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে মামলার বাদী বাবুল আক্তারকেই প্রধান আসামি করা হয়। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া। আসামিদের মধ্যে শুধু মুসা পলাতক আছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।
ওই বছরের ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ২০২৩ সালের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন সাক্ষ্য দেন। এ পর্যন্ত ৪৯ জনের সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়েছে।
মন্তব্য করুন