কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৪, ০৭:১১ পিএম
আপডেট : ১৩ মে ২০২৪, ১০:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কাজে তারা জনবিদ্বেষী, হতে চান জনপ্রতিনিধি

বাম থেকে শিবলু, বুরহান, জিন্নাহ। ছবি : সংগৃহীত
বাম থেকে শিবলু, বুরহান, জিন্নাহ। ছবি : সংগৃহীত

অতীত রেকর্ড সবই অপরাধমূলক। ধর্ষণ থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা, জমি দখল, নারী শ্রমিক নির্যাতন, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা জনবিদ্বেষী কাজে সিদ্ধহস্ত। এমন সব অভিযোগের পাহাড় যাদের মাথায়, তারাই হতে চান জনপ্রতিনিধি। শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় বেশিরভাগ চেয়ারম্যান প্রার্থীর অতীত রেকর্ড এমনই ভয়াবহ। জনসমর্থন নয়, জেলা পর্যায়ের দুই নেতার আশীর্বাদে এসব দাগি ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হতে চেষ্টা করছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে শেরপুর জেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে। নকলা উপজেলা নির্বাচনে ৭৯টি ভোটকেন্দ্রে মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৬ জন ভোটার রয়েছেন। এসব ভোটারের মন টানতে নানা প্রতিশ্রুতি শোনাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে বেশিরভাগ প্রার্থীর অতীত রেকর্ড ভয়াবহ। দাগি ও নানা অপরাধে অভিযুক্ত প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম শাহ মো. বুরহান, সফিকুল ইসলাম জিন্নাহ ও মোকসেদুল ইসলাম শিবলু।

শাহ মো. বুরহান

উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য শাহ মো. বুরহান ২০১৯ সালে নৌকার বিরোধিতা করায় উপজেলা যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার হন। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মাদক সেবনের অভিযোগ বেশ পুরোনো। এলাকায় বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। নকলা পোস্ট অফিসের পেছনের বাড়ি থেকে এক ব্যক্তির মেয়েকে (সামাজিক নিরাপত্তার কারণে নাম গোপন রাখা হলো) তিনি ধর্ষণ করেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। ওই সময় মেয়েটি আহত হওয়ায় ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। বুরহানের বিরুদ্ধে মাটি কাটার এক নারী শ্রমিককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ আছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনজনিত অনেক ঘটনারও অভিযোগ রয়েছে।

বুরহানের বিরুদ্ধে জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ, নকলা মুরগিহাটির জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ, গড়েরগাঁও এলাকার এক ব্যক্তিকে মামলায় জড়িয়ে তাদের জমি আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বাইপাস রোড এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ লাগিয়ে বিবদমান জমি নিজেই দখলে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বুরহানের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। পাঁচকাহনিয়া মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্য করতে গিয়ে সভাপতির পদ হারান তিনি। একই পদের জন্য একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষ নেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে নিয়োগ বাতিল হয় এবং তাকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া নকলা হাইস্কুলের সভাপতি থাকাকালে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে হানিফ নামের এক শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সর্বমহলে আলোচিত।

এ ছাড়া হাসপাতালে নিয়োগের কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মেরে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পিপড়িকান্দি এলাকার মজিবর নামের এক ব্যক্তির ছেলেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৪ লাখ ও ৫নং বানেশ্বর্দীর বাউসা হাইস্কুলের নিয়োগ বাণিজ্য করে ৩০-৪০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদে ৫ বছরে শিক্ষাবৃত্তির ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নিজেই আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে বুরহানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার মোবাইলে ফোন দিলে ফোনটি রিসিভ হয়নি। পরে তার মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।

সফিকুল ইসলাম জিন্নাহ

বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম জিন্নাহ মূলত দলছুট রাজনীতিবিদ। আ.লীগের লোক পরিচয় দিলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে নৌকা তথা মতিয়া চৌধুরীকে পরাজিত করতে গামছা মার্কা নিয়ে সংসদ নির্বাচন করে নৌকার পরাজয় ঘটান। তার বিরুদ্ধে ঘুষ-অনিয়ম-দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছরে জিন্নাহর সম্পত্তি বেড়েছে ১০ গুনেরও বেশি। হঠাৎ করেই তার আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার বিষয়টি এলাকায় বেশ আলোচিত। সম্প্রতি তিনি পৌরসভায় দুটি বাড়ি ও জমি কিনেছেন।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জিন্নাহর বিরুদ্ধে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন না দিয়ে টাকার বিনিময়ে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেন। ফলে পুরো উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়। গত উপজেলা আ.লীগের সম্মেলনে জিন্নাহর অনিয়ম স্বজনপ্রীতি-দুর্নীতি বাণিজ্য দলের হাই কমান্ড অবগত। একই পরিবারের দুই ভাইকে পদ দেন তিনি। আবার একই ব্যক্তি আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক ও যুবলীগের আহ্বায়ক। তারই সহোদরকে আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করেন।

উপজেলা আ.লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল। কিন্তু তাকে বাদ দিয়ে জিন্নাহ উপজেলায় ১৬১ জন মুক্তিযোদ্ধা জীবিত থাকতে নিজের আপন ভাতিজা বুলবুলকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বানান। বুলবুল এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। বিপুল পরিমাণ মাদকসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন বুলবুল।

জিন্নাহ সম্প্রতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি করতে গিয়েও কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বলে স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ রয়েছে। কমিটি নিয়ে ক্রমাগত দুর্নীতির কারণে গত বছরের শেষের দিকে ৮নং চর অষ্টধর ইউনিয়ন কমিটি দিতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন তিনি। সারা দেশে ঘটনাটি আলোচিত। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠকর্মী পদে স্থানীয় নিয়োগে ঘুষ নিয়ে লোক নিয়োগ দেওয়ায় জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অভিযোগের বিষয়ে জিন্নাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, যারা অভিযোগ করছে তাদের কাছ থেকে জেনে নিন। যারা চোর তাদেরই বড় গলা থাকে। তাই এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

মোকসেদুল ইসলাম শিবলু

জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সদস্য মোকসেদুল ইসলাম শিবলু ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলায় ১৪ বছর জেল খেটেছেন। গত বছর তিনি কারাগার থেকে বের হন। শিবলুর বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি ডাকাতির মামলা রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলে গুলিবর্ষণ, বেগম মতিয়া চৌধুরীর শাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার কারণে দলের ভেতরে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। শিবলু ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে শিবলুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, আমি যদি এ ধরনের অপরাধ করতাম তাহলে তো আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারতাম না। আমার প্রতিপক্ষ এসব অভিযোগ করেছে। আমার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা হয়েছিল। আমি হাইকোর্টে খালাস পেয়েছি। আমি এলাকায় জনপ্রিয় নেতা। আমি জেল থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়েছি। জনগণ এসবের জবাব ২১ তারিখে দেবে।

গোপন মিটিংয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

এদিকে নকলার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে গত রোববার (১২ মে) বিকেল ৩টার পর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও শেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রোমানের সঙ্গে মিটিং করেন কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। জেলা পরিষদ কার্যালয়ে মিটিং শেষে তারা শেরপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানুর বাসায় গিয়েও মিটিং করেন।

মিটিংয়ে গণপদ্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুর রহমান আবুল, চর অষ্টধর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী, পাঠাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান গেন্দু উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ে আজ সোমবার (১৩ মে) থেকে এসব ব্যক্তি নির্বাচনের দিন কেন্দ্র দখল ও ভোট কাটার প্রস্তুতি শুরু করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, সংসদ সদস্য বা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে কোনো সভা করতে পারেন না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে ডিএমপি কমিশনারের আর্থিক সহায়তা

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান তিতাসের 

আমেরিকান দূতাবাসে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া

আইনজীবী হত্যা : বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে সিএমপির বিৃবতি

লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইরানের প্রতিক্রিয়া

হঠাৎ জর্ডান সীমান্তে গর্ত খুঁড়ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী

কুষ্টিয়ায় টিসিবি পণ্য কিনতে গিয়ে প্রাণ গেল দুই নারীর

কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে : মির্জা ফখরুল

মিতু হত্যা মামলা / বাবুল আক্তারের জামিন

হবিগঞ্জে দুপক্ষের সংঘর্ষে ওসিসহ আহত ৩০

১০

চিঠির সঙ্গে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?

১১

ইসকন নিষিদ্ধ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন

১২

প্রকাশ্যে এসেই ৫২ প্রস্তাব দিলেন শাবিপ্রবি শিবিরের সভাপতি-সেক্রেটারি

১৩

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের মৃত্যু, বয়স কত?

১৪

‘আমার বাবা নির্দোষ, আমার বাবার চাকরি ফেরত চাই’

১৫

চাঁদাবাজির মামলা থেকে তারেক রহমানকে অব্যাহতি

১৬

চীন যাচ্ছেন জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামী দলের নেতারা

১৭

সচিবালয়ে বিক্ষোভ, নিরাপত্তা জোরদার

১৮

চট্টগ্রাম আদালতের কার্যক্রম বন্ধ

১৯

আইনজীবী হত্যার ভিডিও দেখে আটক ৬ : প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

২০
X