৫৭ বছর বয়সী ট্রাফিক কনস্টেবল আব্দুস সামাদ এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। চাকরি জীবন শেষে অবসরে গিয়ে হোমিও চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতে চেয়েছেন তিনি। সোমবার (১৩ মে) দুপুরে তার কার্যালয়ে মিষ্টিমুখ করানোর পাশাপাশি ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘৫৭ বছর বয়সে এসে এসএসসি পরীক্ষায় এমন ফলাফল করা সত্যিই প্রশংসার। ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আব্দুস সামাদের এই ফলাফল জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়াদের অনন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তিনি নিজেই শুধু এই পরীক্ষায় বিজয়ী হননি, বরং জেলা পুলিশের আনন্দের একটি উৎস হয়ে উঠেছেন। সারা দিন কঠোর পরিশ্রমের পরও তিনি দমে না গিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই করেছেন। তার এই লড়াইকে আমরা সম্মান জানাই।’
আব্দুস সামাদ বগুড়ায় ট্রাফিক পুলিশে চাকরি করেন। আর মাত্র তিন বছর পরই তিনি চাকরিজীবন থেকে অবসরে যাবেন। সেই ইচ্ছা থেকেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন আব্দুস সামাদ। তার এই কৃতিত্বে পরিবারের সদস্যরা যেমন খুশি, তেমনি আনন্দে ভাসছে বগুড়া জেলা পুলিশ বিভাগ। এমন ফলাফল জানার পর জেলা পুলিশ সুপার তাকে ডেকে নিয়ে সংবর্ধিত করেছেন।
আব্দুস সামাদ নাটোরের মহরকয়া নতুনপাড়া কারিগরি ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ২৫ পেয়ে উর্ত্তীণ হন তিনি। চাকরিজীবন শেষে অবসরে গিয়ে যেন তিনি হোমিও চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতে পারেন এ জন্যই এই বয়সে লেখাপড়া শিখা।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ ১৯৮৭ সালে ৮ম শ্রেণি পাস করে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ব্যক্তিজীবনে দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। বড় মেয়েকে লেখাপড়া শেষে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন; আর ছোট ছেলে পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।
আব্দুস সামাদ জানান, চাকরিজীবন প্রায় শেষ দিকে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে, এক ছেলে চাকরিতে, অন্যজন লেখাপড়া করছে। চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে তিনি কী করবেন ভাবনায় পরেন। তখন সময় কাটানোর জন্যও কিছু করা দরকার, আর সেটিও যেন হয় মানুষের জন্যই ভালো কাজ। সেই ভাবনা থেকেই হোমিও চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা জাগে। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন এসএসসি পাস করে হোমিও কলেজে ভর্তি হয়ে ডিএইচএমএস কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। অথচ তিনি এসএসসি পাসই করেননি। ফলে হোমিও কোর্স করা নিয়েও পড়েন দোটানায়। পরে কয়েকজন সহকর্মী এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ২০২২ সালে পুনরায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। নাটোর মহরকয়া নতুনপাড়া কারিগরি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে সেখান থেকেই এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।
সামাদ বলেন, ‘চাকরি করে যেটুকু সময় পেতাম, সেই সময়ে পরিবারের কাজ শেষ করে লেখাপড়া করতে হতো। পরীক্ষা দেওয়ার পর মনে হয়েছে পাশ করব। ফলাফল যা হয়েছে এতেই আমি খুশি। আর আমার পরিবারের সদস্যরাও পাশের খবরে খুব খুশি হয়েছে। আমি পাস করেছি শুনে স্যারেরা (পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) আনন্দে মিষ্টি এনে আমাকে খাইয়েছেন, ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আমি পাস না করলে বুঝতেই পারতাম না তারা আমাকে এত পছন্দ করেন, ভালোবাসেন।’
মন্তব্য করুন