তার জীবনের ধাপে ধাপে এসেছে নানা বাধা। কখনো হোঁচট খেতে হয়েছে। আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। সবকিছু উপেক্ষা করে চালিয়ে গেছে পড়াশোনা। ফলও পেয়েছে। এবারের দাখিল পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এখন উচ্চশিক্ষিত হয়ে পরিবারের অভাব ঘুঁচিয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চায় এ অদম্য মেধাবী সুরাইয়া।
বাবা রিকশাচালক, মা মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। বাবা-মা দুজনেরই নেই কোনো অক্ষরজ্ঞান। অভাব অনটনে কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে থেকেছেন। ঠিকমতো মাদ্রাসার বেতনও দিতে পারেনি। তবু পড়ালেখা বন্ধ করেনি সুরাইয়া আক্তার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া টেকনিক্যাল ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছে অধম্য মেধাবী সুরাইয়া আক্তার। মেয়ের প্রবল আগ্রহ আর মেধা থাকলেও আর্থিক অনটনের কারণে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে পরিবারে মধ্যে এক প্রকার শঙ্কা কাজ করছে।
তিন বোনের মধ্যে সুরাইয়া সবার বড়। সে ছাড়াও এক বোন ৮ম শ্রেণিতে, ছোট বোন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। তার পিতার নাম দুলাল মিয়া। তাদের পরিবার আখাউড়া পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
অভাবের সংসারে অটোরিকশাচালক বাবার আয় যথেষ্ট না হওয়ায় পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেননি সে। তাইতো নিজের পড়াশোনার খরচ চলাতে ফাঁকে ফাঁকে অন্যকে প্রইভেট পড়িয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। এমন কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাননি সুরাইয়া।
মেধাবী সুরাইয়া আক্তার বলেন, আমি নিয়মিত মাদ্রাসায় গেছি। কোনো দিন মাদ্রাসা বন্ধ করিনি। দারিদ্র্যতার কারণে প্রাইভেট পড়তে পারেনি। তাছাড়া মাদ্রাসার পাঠদানের পড়া মাদ্রাসাতেই বসে শেষ করতাম। তারপর নিয়ম করে বাড়তি পড়া পড়েছি। পড়াশোনার খচর চালাতে ছাত্রছাত্রীদের পাইভেট পড়িয়েছি। কারণ আমার পিতার সামান্য আয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ৩ বোনের পড়ালেখার খরচ জোগানো খুবই কঠিন ছিল।
সুরাইয়া আরও বলে, বাবা-মায়ের প্রচেষ্টা ও নিজেদের অদম্য ইচ্ছের কারণেই আজ ভালো ফলাফল অর্জন করেছি। তাছাড়া আমার মাদ্রাসার শিক্ষকরা আমাকে সার্বিকভাবে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। তারা আমার পাশে না থাকলে আমি হয়ত এ ফলাফল করতে পারতাম না। আমার ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার। এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। ডাক্তার হয়ে যেন মানুষের সেবা করতে পারি।
এ দিকে মেয়ের ভালো ফলাফলে খুশি হলেও উচ্চশিক্ষা নিয়ে যেন মাথায় বাজ পড়েছে বাবা মো. দুলাল মিয়ার। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্নই দেখি। তবে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে দারিদ্র্যতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তার উচ্চশিক্ষাসহ পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারব কি না, তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছি।
আখাউড়া টেকনিক্যাল ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, সুরাইয়া একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। সে নিয়মিত মাদ্রাসায় আসত। পড়াশোনার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগী ছিল। আমরা সবসময় তাকে সহযোগিতা করেছি। সে আমাদের মাদ্রাসার গর্ব। দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে সে যে সাফল্য অর্জন করেছে সত্যি তা গর্ব করার বিষয়।
মন্তব্য করুন