রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেছেন, আপনাদের সুবিধার্থে রেলপথে আম পরিবহনের ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাতে করে আমের গুণাগুণ ঠিক রেখেই সব চেয়ে কম খরচে আপনাদের এই আম দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো যায়।
শনিবার (১১ মে) দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে ডবল লাইন করার প্রস্তাব এসেছে। ডাবল লাইন তো আর একদিনে হবে না। আমরা কাজ শুরু করেছি। সমস্ত লাইনের মধ্যে যেখানে সিঙ্গেল গেজ রয়েছে সেখানে ডাবল গেজ করার চেষ্টা করেছি। কাজ শুরু হয়েছে। অনেক জায়গায় প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টা আমরা অবশ্যই বিবেচনা করব ইনশাআল্লাহ। যত দ্রুত সম্ভব এগুলো আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।
রেলমন্ত্রী বলেন, আম পরিবহনে আমরা ডাকবিভাগকে কাজে লাগাতে পারি। তবে আমার মনে হয়, বর্তমান পর্যায়ে এই যে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো আছে, এদের সঙ্গে আমরা একটা কন্ট্রাকে আসতে পারি। কুরিয়ার সার্ভিসগুলো অনেক এপ্রিস্রেড। আমরা তাদের সঙ্গে বসে আপনাদের সুবিধার্থে একটা আলোচনা করব। আলোচনায় যে সমস্যাগুলো উঠেছে আমাদের জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার আছেন। আপনাদের সঙ্গে বসে সমস্যাগুলো আরও বিশদ আলোচনা করা হবে। আপনারা বলেছেন, যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে লাগেজভ্যান লাগানোর জন্য। আগে তো লাগেজ ভ্যান ছিল প্রত্যেকটি যাত্রীবাহী কোচের সঙ্গে। অন্য যে শস্যগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিবহনের ব্যবস্থা করব। আমরা ঈদের সময় গবাদিপশু পরিবহনের ব্যবস্থা করি।
তিনি বলেন, কোনো অসুস্থ রোগীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সে কিন্তু আর বাঁচে না। আমরা এখন অসুস্থ ধরে নেন। সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের টেনে তুলছেন। তিনি রেলকে ভালোবাসেন। এই পরিবহনটা খুবই সস্তা পরিবহন। সেটা যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বলেন আর পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেই বলেন। নতুন নতুন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেটি দেশের ৮ জেলাকে কানেক্ট করবে। সমস্যা থাকবে সমস্যার সমাধানের জন্য আপনারা পরামর্শ দেবেন। কিন্তু আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন না। প্রধানমন্ত্রীর যে সদিচ্ছা আছে সেটি বাস্তবায়নে আমরা চেষ্টা করছি। আপনারা একটু আমাদের সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করেন।
তিনি আরও বলেন, একসময় রেল খুবই ধুকে ধুকে চলছিল। অনেক জায়গায় রেল (ট্রেন) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রাজবাড়ীতে রেললাইন তুলে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের নামে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। সৈয়দপুর রেলের বড় কারখানা যেখানে ২৮০০ কর্মচারী দরকার সেখানে মাত্র সাড়ে ৮০০ শ্রমিক আছে। আউটসোর্সিং বা যারা চলে গেছে তাদের নিয়ে এনে কাজ চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের লোক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন আমরা কাজ শুরু করেছি।
এদিকে সেমিনারে জানানো হয়, ছয়টি লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে আম পরিবহন করা যাবে ২৮ দশমিক ৮৩ টন। তবে এবার ট্রেন যাবে পদ্মা সেতু হয়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এই ট্রেন। যাত্রাপথে রহনপুর স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, আব্দুলপুর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা স্টেশনসহ মোট ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। এই ট্রেন ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ২টা ১৫ মিনিটে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম পরিবহনে ভাড়া লাগবে ১ টাকা ৪৭ পয়সা, রাজশাহী থেকে ১ টাকা ৪৩ পয়সা, পোড়াদহ থেকে ১ টাকা ১৯ পয়সা, রাজবাড়ী থেকে ১ টাকা ৭ পয়সা, ফরিদপুর থেকে ১ টাকা ১ পয়সা এবং ভাঙ্গা থেকে ৯৮ পয়সা। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। ট্রেন ভাড়া পেয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে তিন হাজার ৯৯৫ টন আম পরিবহন করা হয়েছে। এ থেকে রেলের আয় হয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। গত চার বছরে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসা করতে তেল খরচ হয়েছে ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ফলে এ কয়েক বছরে ট্রেনের লোকসান হয়েছে ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকা।
তবে আম ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলেন, ট্রেনে প্রতি কেজি আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় পাঠাতে খরচ হয় এক টাকা ৩২ পয়সা। ট্রেনে খুব কম খরচে আম পরিবহন করা গেলেও বারবার ওঠানামা করার কারণে ঝামেলা বেশি হওয়ায় সড়কপথ ও কুরিয়ারকে বেছে নেন ব্যবসায়ীরা।
২০২০ সালের ৫ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ৪৬ দিন চলেছে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর ট্রেনে এক হাজার ২০০ টন আম পরিবহন করা হলেও কোরবানির পশু পরিবহন হয়নি। ২০২১ সালের ২৭ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৫০ দিন চলেছিল ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর দুই হাজার ২৩৫ টন আম পরিবহন করা হয়েছিল।
২০২২ সালের ১৩ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সাত দিন চলে এ স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর ১৭৯ মেট্রিক টন আম, ৩৬টি গরু ও ১৬০টি ছাগল পরিবহন করা হয়। ২০২৩ বছর ৮ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ১৮ দিন স্পেশাল ট্রেন চলেছে। এ বছর ৩৮২ টন আম পরিবহন করা হয়।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, রেলওয়ের লোকসান হলেও আম চাষি, ব্যবসায়ী ও খামারিদের সুবিধার্থে এ ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, স্থানীয় আমচাষিদের উদ্বুদ্ধ করে ট্রেনে আম পরিবহনের মাত্রা বাড়ানো গেলে কমে আসবে লোকসানের পরিমাণ। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে সাধারণত ছয়টি ওয়াগন থাকে। আমরা এবারও আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে বসব।
২০২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি ওয়াগন যুক্ত করে কোরবানির পশু পরিবহনের ব্যবস্থা করে রেলওয়ে। প্রতিটি ওয়াগনের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৩০ টাকা।
সেমিনারে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, বিভাগের ৮ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছাড়াও আম ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
মন্তব্য করুন