পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোপন কক্ষে সিল মারা ব্যালটের সঙ্গে ছবি তুলেছেন আশরাফুল ইসলাম নামে এক ইউপি চেয়ারম্যান। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডিতে পোস্টসহ বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর আইডির পোস্টসহ বিভিন্ন আইডিতে কমেন্ট করেছেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুরে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেন।
জানা গেছে, আশরাফুল ইসলাম তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, এ ছাড়া তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
বুধবার (৮ মে) জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম আচরণবিধি অমান্য করে মোবাইল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। পরে ভোট দেওয়ার গোপন বুথে গিয়ে ব্যালটে সিল মেরে সেখানেই ব্যালটসহ ছবি (সেলফি) তুলেন তিনি। বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ব্যক্তিগত আইডিতে পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায়, তিনি সিল মারা ব্যালট এক হাতে ধরে আরেক হাতে সেলফিটি তুলেছেন এবং সেই ছবি আপলোড দিয়ে লেখেন ‘ভালোবাসা নেতার পেছনে যায় না, যায় ভালোবাসার পেছনে।’
এর আগেও এই জনপ্রতিনিধি গত ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করে সিল মারা ব্যালটের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ভোটকেন্দ্রে গোপন বুথে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ছবি তোলা বেআইনি ও কোনো ভোটার মোবাইল ফোন নিয়ে ভোটকক্ষে প্রবেশ ও তা ব্যবহার করা যাবে না। তবে ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রিসাইটিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকা অবস্থায় একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে কীভাবে এমন আইন ভঙ্গ হলো এ বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে স্থানীয় মানুষের মাঝে।
একজন ভোটার কর্তৃক এরূপ কর্মকাণ্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩ এবং উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ।
এ বিষয়ে শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম হোসেন বলেন, ভোটকেন্দ্রে গোপন বুথে ভোট দেওয়ার ছবি তোলা যাবে না। তিনি যে কাজটি করেছেন সেটি বেআইনি। তিনি এ কাজটি করতে পারেন না। যেটা করেছেন সেটা আইনবহির্ভূত কাজ। বিষয়টি আমি দেখতেছি।
এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি জানান, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বশীল পদে থাকা অবস্থায় তিনি যে কাজটি করেছেন সেটি ঠিক নয়। বিষয়টি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেখবেন। তবে বিষয়টি আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি উপজেলা নির্বাচন ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন।
মন্তব্য করুন