কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতিতে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে অযত্ন আর অবহেলায় জন্ম নেওয়া বুনো ডেইজি ফুল। উপজেলার মেঠোপথের দুপাশে, বিভিন্ন জলাশয়ের পাড়ে, পতিত জমিতে ও বাড়ির আশপাশে দেখা মিলছে এ ফুলের। এ ফুলের নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য সকলকে কাছে টানছে। সবুজের মাঝখানে হলুদ ফুলের মনমাতানো সৌন্দর্যে যে কেউ এর প্রেমে পড়ে বিমোহিত হচ্ছেন।
জানা গেছে, বুনো ডেইজি বা সিঙ্গাপুর ডেইজির বৈজ্ঞানিক নাম স্ফ্যাগনেটিকোলা ট্রিলোবাটা। এরা সূর্যমুখী বা অ্যাস্ট্রেসিয়া পরিবারের অন্তর্ভুক্ত দুর্দমনীয় আগাছা হিসেবে পরিচিত। এই উদ্ভিদটি লতার মতো মাটিতে জড়িয়ে থাকে। এক সময় এটি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বাগানে অন্যান্য ফুলের সঙ্গে চাষ করা হতো। ভূমি ক্ষয় রোধ করার জন্য এই ফুল একসময় ওই দেশে রেলপথ ও বিভিন্ন জলাশয়ের পাড়ে লাগানো হতো। এই ফুল মুখে নিয়ে চিবুলে মুখের ভেতর বিশেষ ধরনের সেনসেশন তৈরি হয় যা অনেকটা বৈদ্যুতিক শকের মতো অনুভূত হয়। যে কারণে এটাকে ইলেকট্রিক ডেইজিও বলা হয়। এরা অধিক ঠাণ্ডা পছন্দ করে না। বুনো ডেইজি অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন মেঠোপথের দুপাশে,পতিত জমিতে, বাড়ির আশপাশে ও বিভিন্ন জলাশয়ের পাড়ে হলুদ গহনা পরে মনোরম সাজে সেজেছে বুনো ডেইজি। প্রকৃতিতে ফোটা হলুদ পাপড়ি বিশিষ্ট ডেইজি ফুলের এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করছেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুব একটা নেই। বুনো ডেইজি ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ নানা বয়সী মানুষ। তরুণীদের খোঁপায় ও বেনিতে শোভা পাচ্ছে এ ফুল। মোবাইল ফোনেও কেউ কেউ তুলছেন স্থিরচিত্র। কেউ কেউ এ ফুলের সঙ্গে নিচ্ছেন সেলফি।
শুধু আগাছা বা ফুলের সৌন্দর্যই নয়, বুনো ডেইজি বা সিঙ্গাপুর ডেইজি ঔষুধি গুণেও সমৃদ্ধ একটি উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ। প্রাচীনকাল থেকেই এই উদ্ভিদটি মানুষের নানা রোগের উপশম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সর্দি-জ্বর, ফ্লু, ঠান্ডা, মূত্রপ্রদাহ, মূত্রস্বল্পতা, হেপাটাইটিস, পিঠ ব্যথা, দাঁত ও মাড়ি ব্যথা, রিউমেটিজমসহ নানা রোগে এ উদ্ভিদের ফুল, পাতা কাণ্ড ও মূল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওষুধ ছাড়াও এই উদ্ভিদটি খাদ্য ও প্রসাধনী হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এর কাঁচা পাতা সালাদ ও স্যুপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এই ফুলের নির্যাস নেইল পালিশ রিমুভার হিসেবে ও নখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এ পদ্ধতি শিশুদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু হেনা লিটন কালবেলাকে বলেন, প্রকৃতিতে নাম না জানা অনেক ফুল ফোটে। এসব ফুলের যত্ন করতে হয় না, এমনি এমনিতেই এসব ফুল ঝোপঝাড়ে ও রাস্তার পাশে ফোটে। এসব ফুলের একটি এই বুনো ডেইজি। এ ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি যেন নৈসর্গিক অবস্থানে পৌঁছে গেছে। এ ফুলের গন্ধ না থাকলেও এর লোভনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সবাই।
দীর্ঘভূমি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমাদের দেশে চাষ হওয়া ফুলগুলো ছাড়াও পথে-প্রান্তরে ও বনবাদাড়ে অনেক সুন্দর সুন্দর ফুল ফোটে। এসব ফুলের সৌন্দর্যে চিরচেনা বাংলার প্রকৃত রূপ ভেসে ওঠে। বুনো ডেইজি ফুলও এমনি এমনিতেই গজানো এক পথ ফুল, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধনে ভূমিকা রাখছে। এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এই ফুল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন স্থানীয়রা।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, সিঙ্গাপুর ডেইজি বা বুনো ডেইজি উদ্ভিদটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সৌন্দর্য প্রদর্শনের পাশাপাশি মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়েও ব্যবহার হয়। ঔষধি গুণে ভরা এই উদ্ভিদ আমাদের দেশের পতিত জমি ও রাস্তার ধারে এমনি এমনিই জন্মে। এই অবহেলিত বুনো ডেইজি দাঁত ব্যথায় ও মুখ গহ্বরে আলসার সারাতে ব্যবহার করা হয়। এর কচি পাতা, ফুল ও কুঁড়িতে রয়েছে ন্যাচারাল এনালজেসিক, যে কারণে এটি অনুভূতিনাশক হিসেও ব্যবহৃত হয়। এই উদ্ভিদে অণুজীব ও ছত্রাকনাশক উপাদান রয়েছে। এর মূল অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ভেষজ এই উদ্ভিদ মানুষের নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
মন্তব্য করুন