কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষের কয়েক হাজার মানুষ। দুই দফা সংঘর্ষে আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
বুধবার (৮ মে) সকালে ও মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে উপজেলার আগানগর গ্রামের দুই বংশের লোকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আধিপত্য বিস্তার ও জিল্লুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে দুটি পক্ষের দ্বন্দ্ব জড়িয়ে পড়ে।
এ সময় লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনায় আনুমানিক ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন আগানগর ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক ও ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মো. সেলিম মিয়া।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভৈরব থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ওই এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের সময় বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে সুরুল্লার বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। তবে এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন আগানগর সুরুল্লার বাড়ির মো. নজরুল ইসলাম।
সকালে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগরে অবস্থিত আনন্দ বাজারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও জিল্লুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে দুটি পক্ষের দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘদিন ধরে। একটি পক্ষ আগানগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি সাইফুল ইসলাম সুমন ও অপরপক্ষ আগানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোমতাজ মিয়ার পুত্র ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম হিরা। গত ২২ এপ্রিল জিল্লুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় একজন চিকিৎসককে অতিথি করা নিয়েও দুই প্যানেলের মধ্যে হট্টগোল হয়। এ ঘটনা স্থানীয়ভাবে সমাধানও হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে শফিকুল ইসলাম হিরার বাড়ির শুক্কর মিয়ার সঙ্গে ও সাইফুল ইসলাম সুমনের পক্ষের মো. আক্কাস আলীর ড্রেজারের পাইপ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও মারামারি হয়। পরে তারা মাইকে ঘোষণা দিলে দুই পক্ষে হাজার হাজার মানুষ টেঁটা, বল্লম, দাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩০ জন মানুষ আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বুধবার সকাল ৮টায় আবারও মাইকে ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয় দফায় সুরুল্লার বাড়ি লোকজনের সঙ্গে বেপারি বাড়ি ও আফিল উদ্দিনরা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের লিপ্ত হয়। ৩ ঘণ্টা ধরে চলে এ সংঘর্ষ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানান ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন খান।
আগানগর গ্রামের সরুল্লা বাড়ির শুক্কুর মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেপারি বাড়ি ও অফিল উদ্দিন মিয়ার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ নিয়ে গণসংযোগকালে আক্কাস মিয়া ও তার লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে তারা স্থানীয় একটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
বেপারি বাড়ি ও আফিল উদ্দিনের বাড়ির পক্ষে সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে পূর্ব থেকেই ঝামেলা ছিল তাদের। মঙ্গলবার এরই রেশ ধরে শুক্কুর মিয়াসহ সুরুল্লার বাড়ির লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
দুই দফা সংঘর্ষে আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে আটজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ও কর্তব্যরত চিকিৎসক।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জানান, আগানগর গ্রামের ঝগড়ায় আহত হয়ে উভয়পক্ষের ৩০ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। এছাড়াও সংঘর্ষে আহত হয়ে সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। এর মধ্যে আটজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন খান জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই বংশের লোকজন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এবং বুধবার সকালে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। দুই পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন