দিনমজুর বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া পেট জোড়া লাগানো জমজ শিশু (কনজয়েন্ট টুইন বেবি) মায়মুনা ও মরিয়ম বাবার কোলেই গেলেন চিরনিদ্রায়। অর্থসংকটে থাকায় দুই দিন জ্বরে ভোগা এই দুই শিশুর চিকিৎসা চলছিল পল্লীচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
মা সন্তানদের ওষুধ খাইয়ে বাবার কোলে রেখে যান। তারপর বাবার কোলেই চিরনিদ্রায় ঢলে পড়েন তারা।
শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বদলকোট ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের উত্তর বদলকোট গ্রামের দরগা বাড়িতে তাদের মৃত্যু হয়।
নবজাতক দুটির মা আফরোজা সুলতানা মেঘলা নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বদলকোট ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের উত্তর বদলকোট গ্রামের দরগা বাড়ির মাহবুব আলমের মেয়ে। মো. শাহানুর ইসলামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায়। শাহানুর মুন্সীগঞ্জের ভাটারচরে একটি কাপড়ের মিলে স্বল্প বেতনে দিনমজুরের কাজ করেন। নিরুপায় হয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে নানার বাড়িতে চলে যান তারা।
জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারি ভোর ৪টায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে আফরোজা সুলতানা মেঘলা ও মো. শাহানুর ইসলাম দম্পতির জমজ দুই কন্যার জন্ম হয়। তবে নবজাতক দুজনের পেট জোড়া লাগা (কনজয়েন্ট টুইন) থাকায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে তাদের। টাকার অভাবে তাদের দিনমজুর বাবা উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না এমন প্রতিবেদন দৈনিক কালবেলা প্রকাশ করে। বিষয়টি নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ি) আসনের সংসদ সদস্য ও শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচএম ইব্রাহিম এমপির নজরে আসলে তিনি চিকিৎসার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
পরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি এইচএম ইব্রাহিম এমপির সহযোগিতায় বিকেলে শিশু দুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন তারা। গত দুইদিন জ্বরে আক্রান্ত ছিল মায়মুনা ও মরিয়ম। শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে মা আফরোজা ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বাবা শাহানুরের কোলে দিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই বাবার কোলে মারা যান তারা।
নবজাতক দুটির মা আফরোজা সুলতানা মেঘলা বলেন, আমার সন্তানদের ওষুধ খাইয়ে আমি গোসল করতে গেছি। হঠাৎ করে আমার স্বামীর চিৎকার শুনে এসে দেখি আমার সন্তানদের নড়াচড়া নেই। অর্থের অভাবে দীর্ঘদিন তাদের ভালো চিকিৎসা করাতে পারি নাই। আর কিছু বলার ভাষা আমার নাই।
শিশু মায়মুনা-মরিয়মের বাবা শাহানুর ইসলাম বলেন, আমার কোলে আমার সন্তান আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছে। আমি তাদের নড়াচড়া না দেখে চিৎকার দেই। তারপর মানুষজন আসে। স্থানীয় পল্লীচিকিৎসক এসে জানায় তারা আর দুনিয়াতে নাই। অনেকে আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমি অর্থের অভাবে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা করাতে পারি নাই।
চাটখিল থানার ওসি মুহাম্মদ ইমদাদুল হক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তাদের দুইদিন ধরে জ্বর ছিল। কোনো চিকিৎসকের সহায়তা নেয়নি। আজ দুপুরে শিশু দুইটা মারা যায়। নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচএম ইব্রাহিম এমপি ও নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান মহোদয়সহ অনেকেই তাদের অর্থ সহায়তা দিয়েছিল। তাদের ঢাকায় হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়েছিল। কিছুদিন চিকিৎসা শেষে চিকিৎসক তাদের বাড়িতে পাঠায়। তাদের আরেকটু বয়স হলে অপারেশন করার কথা ছিল। সব মিলিয়ে অর্থাভাব ও সঠিক পরামর্শের অভাব ছিল।
মন্তব্য করুন