তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। রেহাই পাচ্ছে না প্রাণিকূলের হাজারো জীব। তীব্র গরমে মাঠে ধান কাটার পাশাপাশি বিলে মাছ ধরেন কৃষক ও জেলেরা। রোদ যখন মাথার ওপর, তখন ক্লান্ত কৃষক ও জেলেরা বিলের পাশের সড়কে সারি সারি গাছের ছায়াতে বসে বিশ্রাম নেন। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে গাছের গুরুত্ব অপরিসীম সেখানে পরিবেশ বিপরীতমুখী কাজে মত্ত বগুড়ার আদমদীঘি বন বিভাগ।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল। সান্দিড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে এ বিলে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা। রাস্তার পাশে রয়েছে সারি সারি গাছ। তবে এখন থেকে আর সড়কের পাশে দেখা যাবে না দাঁড়িয়ে থাকা সবুজে ঘেরা গাছগুলো। এসব গাছ কেটে ফেলছে বন বিভাগ। এতে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
বিলের পাড় ও রাস্তার পাশের সড়কে এসব গাছের বয়স প্রায় ২০ বছর। সড়কে ছায়া দেওয়া এসব গাছ কাটার বিরোধিতা করছেন স্থানীয়রা। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম মেনেই এসব গাছ কাটা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রাম থেকে রক্তদহ বিল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি সড়কের পাশ ও বিলের পাড় দিয়ে প্রায় ১ এক হাজার ২০০ গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কাটা হয়েছে প্রায় ৪০০-৫০০টি গাছ।
স্থানীয় বাসিন্দা আছর আলী নামের এক কৃষক কালবেলাকে বলেন, বন বিভাগ থেকে গাছ কাটছে কাটুক তবে দেখে শুনে বেশি বয়সী গাছ ও মারা যাওয়া গাছগুলো কাটুক। আবার নতুন নতুন গাছ লাগাবে। তবে একবারে সব গাছ কাটায় আমাদের কৃষকদের অসুবিধা হবে। কাজে গিয়ে গরমের মধ্যে গাছের ছায়ায় বসে শান্তি পেতাম।
সান্দিড়া গ্রামের বাসিন্দা কাদের আলী নামে এক জেলে বলেন, এখানে গাছগুলো সব কাটা হচ্ছে তবে কোনো গাছ লাগানো হচ্ছে না। কোনো গাছ লাগানো হবে কিনা তার ঠিক নেই। এই গাছগুলো কাটায় আমাদের সব পেশার লোকদেরই অসুবিধা হচ্ছে। এই বিল ও বিলের আশপাশে প্রায় কয়েকশ কৃষক, জেলে প্রতিদিন কাজ করে সড়কের পাশে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেই। গাছ কাটার ফলে রোদের কারণে আমাদের কাজ করতে অসুবিধা হবে।
তাহমিদ নাফিস দিপ্ত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ এটি আমাদের সকলেরই জানা। সান্তাহারের সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে একটি এ রক্তদহ বিল। তীব্র গরমেও এখানে ছায়া, বাতাস থাকত অনেক। আর সামনে বিলের অথৈ পানি। এ সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেত গাছগুলোর কারণে। সব গাছ কেটে ফেলে সৌন্দর্য নষ্ট করছে বন বিভাগ।
সবুজ আন্দোলন নামের পরিবেশবাদী সংগঠনের আদমদীঘি উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সাগর খান বলেন, বন বিভাগ গাছ কাটবে আবার গাছ লাগাবে। কিন্তু এরা গাছ কেটে আর রোপণ করে না। এই গাছগুলো একবারে না কেটে কয়েক পর্যায়ক্রমে কাটতে পারত। এতে নতুন গাছ রোপণ করে আবারও পর্যায়ক্রমে আগের গাছ কাটলে পরিবেশ সৌন্দর্য দুটাই রক্ষা পেত।
একই সংগঠনের উপজেলার সভাপতি গোলাম রব্বানী দুলাল বলেন, পরিবেশ রক্ষায় নিয়মমাফিক গাছ কেটে নতুন গাছ রোপণ করতে হবে। কিন্তু বন বিভাগ থেকে এর আগেও উপজেলার নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়কের পাশ থেকে কাটা হয়েছে হাজার হাজার গাছ। পরবর্তীতে এসব গাছ লাগানোর কথা থাকলেও দুই বছর পার হলেও একটি গাছও রোপণ করেনি তারা। বন বিভাগ গাছ কেটেই চলছে তবে লাগাচ্ছে না একটিও।
আদমদীঘি বন বিভাগের কর্মকর্তা মতিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, স্থানীয় সমিতির নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ১০ বছর পর পর গাছগুলো কেটে ফেলতে হবে। তারপর নতুন করে আবার গাছ লাগাতে হবে। তবে এই গাছগুলো ২০ বছর আগের, যার কারণে গাছগুলো রাখার আর সুযোগ নেই। আমরা গাছগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে কাটছি। পরবর্তীতে আমরা আবারও এই সড়কের পাশ দিয়ে গাছ রোপণ করব।
এর আগে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের সীমান্ত কেল্লাবাড়ি থেকে রংপুরের তারাগঞ্জের পাঁচ কিলোমিটার অংশের প্রায় আড়াই হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এসব গাছ তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পে ক্যানেলে লাগানো ছিল। ২২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ টাকায় দরপত্রের মাধ্যমে জবা এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এসব গাছ কাটার জন্য দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন