৮৯ কোটি টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জসীম উদ্দীনের বিরুদ্ধে মামলা করে পদ্মা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা। পরে আদালত বিভিন্ন সময় কিস্তিতে টাকা পরিশোধের সময় বেঁধে দিলেও আদেশ মানেননি জসীম উদ্দীন। এতে সস্ত্রীক জসীমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন আদালত। অথচ টাকা আদায়ে তৎপরতা না থাকলেও জসীম ও তার স্ত্রীর জামিন করাতে মরিয়া হয়ে উঠে খোদ পদ্মা ব্যাংক। এতে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শোকজ করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার পর পদ্মা ব্যাংক ও জসীমের পক্ষে ৫ কোটি টাকার পে অর্ডার ও ৭ কোটি টাকার তারিখবিহীন চেক দাখিল করে। এ সময় জসীম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইস্যু করা ওয়ারেন্ট রিকল ও সম্পত্তি জব্দের আদেশ প্রত্যাহারের যৌথ আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আবেদন না মঞ্জুর করে পদ্মা ব্যংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শোকজ করেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম। তিনি কালবেলাকে বলেন, একজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিকে আইনের শর্ত পূরণ ছাড়া জামিন ও সম্পত্তি অবমুক্ত করার আবেদন করে। এ কারণে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবরে আদেশ পাঠানো হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আগামী ৯ মে শোকজের জবাব দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানা যায়, জসীম উদ্দীন চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি এলাকার মহল মার্কেটের মালিক।
আদালত সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক জেসিকা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক জসিমের বিরুদ্ধে গত ৩০ এপ্রিল ৫ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত। বৃহস্পতিবার (২ মে) ঋণখেলাপি জসিমের পক্ষে কোনো টাকা পরিশোধ না করে জামিন আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।
বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, ডিক্রিদার পদ্মা ব্যাংক এবং জসিমের পক্ষে ৫ কোটি টাকার পে-অর্ডার এবং ৭ কোটি টাকার তারিখবিহীন চেক দাখিল করে দায়িকের বিরুদ্ধে ইস্যুকৃত ওয়ারেন্ট রিকল এবং দায়িকের সম্পত্তি জব্দের আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য যৌথভাবে আবেদন করা হয়। অর্থঋণ আদালত আইনের ৩৪ (৬) ধারা ৮৮ কোটি টাকার ২৫% হিসেবে ২২ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় এবং তারিখবিহীন চেক গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় ডিক্রিদার পদ্মা ব্যাংক এবং দায়িকের দাখিলকৃত যৌথ দরখাস্ত নামঞ্জুর করেন আদালত। প্রধান কার্যালয়ের কর্তৃত্ববিহীন ডিক্রিদার ব্যাংকের এরূপ যৌথ দরখাস্ত স্বাক্ষর করায় বিস্ময় প্রকাশও করেন আদালত। আদালতে উপস্থিত ডিক্রিদার ব্যাংকের কর্মকর্তা প্রধান কার্যালয়ের টেলিফোনিক নিদের্শে এমন দরখাস্ত দাখিল করেছেন বলে উল্লেখ করেন। ডিক্রিদার ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের কোনো লিখিত মঞ্জুরিপত্র ছাড়া দায়িকের পক্ষে দরখাস্তে স্বাক্ষর করায় ডিক্রিদার ব্যাংকের আইনজীবী ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এর আগে, গত ৪ এপ্রিল জসিম ও তার স্ত্রী জুহিকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন অর্থঋণ আদালত। কিন্তু শর্ত মোতাবেক ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করে তারা বিলাসী জীবনযাপন অব্যাহত রাখে। বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার গাড়িতে চড়ে সমাজসেবার নামে দুই হাতে টাকা খরচ করতে থাকেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার জসিম উদ্দিনের মালিকানাধীন দুটি গাড়ি, দক্ষিণ খুলশীর জসিম হিল পার্ক, পাথরঘাটা এলাকায় ছয়তলা ভবন ‘মফজল টাওয়ার’ ও চন্দনাইশ এলাকার একটি ডুপ্লেক্স ভবন ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।
মন্তব্য করুন