শিল্পপতি মাদকাসক্ত স্বামী দীপের সংসার ছাড়তে ঘোষণা দিয়েছেন মেধাবী ছাত্রী প্রিয়ন্তী। বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চৌধুরীকান্দা গ্রামে নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
প্রিয়ন্তীর বাবা কুমারেশ সাহা একজন ফুটপাতের হলুদ মরিচের ব্যবসায়ী। স্বামী দীপ ভাঙ্গা বাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রবিন সাহার ছেলে।
প্রিয়ন্তী জানান, আমার বাবা-চাচাদের লোভ দেখিয়ে তারা আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমার সুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে বিবাহ দেন দীপের সঙ্গে। বিবাহ হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি। হিন্দু ধর্মের রীতিনীতিতে অনেক কিছু করতে হয়। দীপ প্রথম রাতেই বিবাহ সম্পন্ন না করে নেশায় আসক্ত হন। সে আমাকে একা রেখে নেশা করতে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ফিরে আসে ভোররাতে। নেশাগ্রস্ত স্বামীর সঙ্গে কোনোভাবেই আমার সংসার করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
প্রিয়ন্তী আরও জানান, মদপান করতে আমাকে জোর করা হতো। আমি রাজি না হলে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করত। নতুন অবস্থায় টয়লেটের মধ্যেও আটকে রাখত। আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড নিয়ে সে সেটাকে চেঞ্জ করে বিভিন্ন অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছেড়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছে। আমি ভাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি করব।
প্রিয়ন্তীর মা শিখা সাহা জানান, আমার মেয়ে প্রিয়ন্তী সেই মুহূর্তে বিবাহ করবে না। দীপের আত্মীয়-স্বজনরা হাতে পায়ে ধরেছে। এ জন্য তাকে অনেক অনুরোধ করে রাজি করিয়েছি। এমন নেশাগ্রস্ত ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ওর জীবনটা বিপন্ন করে ফেলেছে।
ছেলে নেশাগ্রস্ত এটা আমাদের জানা ছিল না। আমরা এই নেশাগ্রস্ত ছেলের কাছে মেয়েকে আর দেব না। আমাদেরকে দীপের পরিবার অনেক ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। গুলি করে মারবে, এসিড নিক্ষেপ করবে। আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এদিকে প্রিয়ন্তীর চাচা গোপাল সাহা জানান, আমার ভাতিজি মেধাবী ছাত্রী, ইন্টারমিডিয়েট পড়ে। নেশাগ্রস্ত ছেলের নিকট বিয়ে দিয়ে ওর জীবনটাকে বিপন্ন করে ফেলেছে রবিন সাহা। আমরা এর বিচার চাই।
প্রতিবেশীরাও এমন নেশাগ্রস্ত ছেলের সঙ্গে মেধাবী ছাত্রী প্রিয়ন্তীকে বিয়ে দেওয়াতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেশী রানী সাহা জানান, আমাদের বাড়ির সামনে এসে ছেলে নেশা খেয়ে মেয়ের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। পুলিশ তখন মাদকসহ ওকে হাতেনাতে ধরেছে।
ভাঙ্গা বাজারের এক ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন জানান, শুনেছি দীপের বিয়েতে ২০০ ভরির উপরে স্বর্ণ দিয়েছেন। এরা মার্কেট করেছেন সিঙ্গাপুর থেকে। এত ব্যয়বহুল বিয়ে আমি জীবনে দেখি নাই।
এদিকে দীপের চাচা রাজকুমার সাহা জানান, আমার ভাইয়ের একমাত্র ছেলে দীপ। আমরা অনেক আনন্দ করে বিয়ে করিয়েছিলাম। কিন্তু দীপ মানসিকভাবে ফিট না। নেশা করে। যার জন্য এমন হয়েছে। আমরা এতে খুশি না। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি ওকে নেশার জগত থেকে ফিরিয়ে আনার।
এ ঘটনায় ভাঙ্গা থানার ওসি মামুন আল রশিদ বলেন, দীপের বিরুদ্ধে আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। দীপ তার স্ত্রীকে দিয়ে মদপানসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করতে জোর করত। পরে তার স্ত্রী প্রিয়ন্তীকে আমরা উদ্ধার করে ওর বাবা-মায়ের হাতে দিয়েছি। এর পরেও যদি দীপ কোনো অন্যায় করে, আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন