এবারের ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে সিলেটে। কোথাও যেন ঠাঁই নাই। পর্যটন স্পট কিংবা হোটেল-মোটেল সবখানে ছিল উপচেপড়া ভিড়। ঈদের দিন ও ঈদের দ্বিতীয় দিনে সিলেটের সবকটি হোটেল পূর্ণ হয়ে যায়।
ঈদের দিন সিলেট নগরীর ধোপাদিঘির পাড়স্থ ওয়াক ওয়ে বঙ্গবীর ওসমানী শিশু উদ্যানে কয়েক হাজার দর্শনার্থী ঘুরে বেড়িয়েছেন। সিলেট শহরের মধ্যে এ শিশু উদ্যানটি একমাত্র বিনোদনের জায়গা। তাই বেশিরভাগ বাবা-মা শিশুদের নিয়ে ঘুরতে যান এখানে।
সিলেটের চা বাগান ঈদের দ্বিতীয় দিনে সিলেটের প্রথম চা বাগান মালনীছড়ায় দর্শনার্থীদের ঢল নামে। চা-বাগানের এ দৃশ্য দেখে কেউ বইয়ের পাতায় চা-বাগানের ছবির থেকে বেশি সুন্দর বলে মন্তব্য করেছেন। আবার কেউ কবিতার পঙক্তি ও গানের মাধ্যমে চা বাগান নিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করছেন।
এ ছাড়া সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে লাক্কাতুরা ন্যাশনাল টি ও তারাপুর চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, চা বাগানগুলোর উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা পথ ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। কেউ একতারা হাতে নিয়ে গান গাইছেন। কেউবা কবিতা আবৃত্তি করছেন। আবার অনেকেই সুন্দর মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ও ডিএসএলআর ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি করতে দেখা যায়।
ছয় বছরের মেয়ে আনিশা জান্নাতকে নিয়ে ঘুরতে আসা শামীমা আক্তার বলেন, মেয়ের বাবা প্রবাসী। একে ৩টি ড্রেস কিনে দেওয়া হয়েছে। তবুও তার বায়নার শেষ নাই। এখন এটা, তখন ওটা লাগবে বলে কান্নাকাটি শুরু করে। বিকেল থেকে পার্কে আসবে বলে বায়না ধরে, তাই নিয়ে এলাম।
বেসরকারি চাকরিজীবী বিশ্বদেব বলেন, সিলেটে এমন একটি জায়গা, যা কোনো কবিতা বা বইয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না। প্রকৃতির কাছাকাছি না এলে বোঝা যায় না প্রকৃতির সৌন্দর্য। আসলে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত চমৎকার এই প্রকৃতি মনে হয় সিলেট ছাড়া আর কোথাও পাব না।
সুনামগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা আরেক পর্যটক আমিনুল ইসলাম জানান, এখানকার সবুজ প্রকৃতি আর রূপ-লাবণ্যতায় বিমুগ্ধ হয় পর্যটক-দর্শনার্থীরা। এখানে ঘুরতে এসে আমরা বন্ধু-বান্ধব সবাই অত্যন্ত খুশি। পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে পারার মতো পরিবেশ রয়েছে।
শিশু উদ্যানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনাজ চৌধুরী বলেন, এটা গরিবের পার্ক নামে পরিচিত। প্রায় দুই যুগ থেকে আমরা শিশুদের সুস্থ বিনোদন দিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন দিবসে এখানে অনেক লোকের সমাগম হয়। এই জায়গা অনেক নিরাপদ। আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন খুবই দক্ষ। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জাফলং বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্পট সিলেটের জাফলং। সিলেট শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে এ পর্যটন স্পটটিতে যেতে হয়। এ ছাড়া জাফলংয়ে তেমন ভালো মানের হোটেল না থাকায় বাধ্য হয়ে পর্যটকরা সিলেটে অবস্থান নেন। ফলে সিলেটের হোটেলগুলোতে জায়গা না পেয়ে অনেকে জাফলংয়ের ছোট ছোট হোটেলগুলোতে রাত কাটান।
জাফলংয়ের ব্যবসায়ী রতন মিয়া জানান, এবার স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি পর্যটক জাফলংয়ে এসেছেন। এতে আমাদের ব্যবসা অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে।
সাদাপাথর বর্তমান সময়ে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর। এখানেও পর্যটকরা সিলেট থেকে রওয়ানা হয়ে স্পটে যান। সেখানে পা রাখার জায়গায় ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসেও নৌকা পাননি পর্যটকরা। বাধ্য হয়ে হেঁটে সাদা পাথরে যান পর্যটকরা।
রাতারগুল সিলেটের অদূরে এ পর্যটন স্পটে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পর্যটক এসেছেন বেশি। ঢাকা থেকে আসা আরিফ হোসেন জানান, এবার আবহাওয়া বেশ ভালো থাকায় এবং প্রশাসন তৎপর থাকায় বেশ ভালো কেটেছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিনোদনকেন্দ্রের ভেতরে না থাকলেও কেন্দ্রগুলোর বাইরে আমাদের পুলিশ সব সময় থাকে। কারও কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও তাৎক্ষণিক কোনো অভিযোগ থাকলে স্থানীয় থানার ওসি বা ৯৯৯ এ কল দিয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য আহবান জানান তিনি।
মন্তব্য করুন