কুমিল্লার দেবিদ্বারে একটি সালিশ বৈঠকে শামীম আহাম্মদ (৪১) নামের এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে গ্রাম্য সালিশদারদের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের উজানীকান্দি গ্রামের খেলার মাঠে পূর্ব পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শামীম আহাম্মদ ওই গ্রামের মৃত আবদুল খালেক মিয়ার ছেলে। শামীম গত ৬ মাস আগে ওমান থেকে দেশে ফিরে বাড়ির পাশে একটি চা দোকান দিয়ে ব্যবসা করতেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারের দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসীরা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে মনির হোসেন ও শামীম আহাম্মদের পরিবারের মধ্যে একটি বিরোধ মীমাংসা নিয়ে মনির হোসেনের উঠানে সালিশ বৈঠক বসেছিল। সেখানে গ্রাম্য সালিশদার ইউপি সদস্য হিরণ সরকার, সিদ্দিক সরকার, মোস্তফা সরকার, সাইফুল ইসলাম ব্যাপারিসহ গ্রামের ১৫-২০ জন উপস্থিত ছিলেন। সালিশ মীমাংসার শেষ পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় উজানীজোড়া গ্রামের মো. আলিম খন্দকারের নেতৃত্বে সাদেক খন্দকার, সুমন খন্দকার, আউয়াল খন্দকারসহ আরও ৫-৬ মনির হোসেনের পক্ষে উপস্থিত হলে বৈঠকে হট্টগোল শুরু হয়।
এ সময় সুমন খন্দকার শামীমকে চর থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারা হয়। পরে বৈঠকে বসা আলিম খন্দকার উত্তেজিত হয়ে নিজের বসার কাঠের চেয়ার দিয়ে শামীমকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে শামীম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্বজনরা শামীমের মরদেহ এলাকায় নিয়ে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন শামীমের বৃদ্ধা মা জোবেদা খাতুন ও আত্মীয়স্বজনরা। ছেলের মরদেহের সামনে বুক চাপড়ে বিলাপ করতে করতে জোবেদা খাতুন বলছিলেন, আইনের কাছে, সরকারের কাছে আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই, তাদের ফাঁসি চাই। তারা আমার চোখের সামনে আমার সোনার মানিককে পিটিয়ে মারল। পিটাতে পিটাতে তিনটা চেয়ার ভাঙছে।
স্বামীকে হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন শামীমের স্ত্রী মোর্শেদা ও তার সন্তানরা। তারাও বারবার চিৎকার দিয়ে হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন।
অভিযুক্ত আলিম খন্দকারের বাবা আবু মুসা খন্দকার বলেন, প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে একটি সালিশ বৈঠক বসে। আমাদের বাড়ির এক লোক ওই বাড়ির এক মেয়েকে বিয়ে করেছে। তারাই আমার ছেলেকে খবর দিয়ে নিয়ে যায়। লোকজনের মুখে শুনেছি, শামীম আহাম্মদ সালিশ বৈঠকে একটি মেয়ে তার জন্মের বলে বলে চিৎকার করায় আমার ছেলে উঠে চেয়ার দিয়ে মারে। আমি এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না।
দেবিদ্বার থানার ওসি মো. নয়ন মিয়া বলেন, খবর পেয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যায় আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তরে জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা জোবেদা খাতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অভিযুক্তরা সবাই পলাতক রয়েছেন।
মন্তব্য করুন