চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ী নেতাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। চসিকের এই দুই কর্মকর্তা হলেন- স্টেট অফিসার রেজাউল করিম এবং প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. লতিফুল হক কাজেমি।
এ ঘটনার ভিডিও শুক্রবার রাতে ভাইরাল হলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি আগামী সোমবারের মধ্যে সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তবে এটার সমাধান না হলে কঠোর অবস্থানে যাবেন বলে জানিয়েছেন মার্কেট সমিতির নেতারা। তাছাড়া শনিবার মার্কেটে এক জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছেন নেতারা।
ওই ভিডিওতে দেখো যায়, চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটস্থ দোকান মালিক সমিতির অফিস কক্ষের চেয়ারে বসে আছেন সমিতির প্রচার সম্পাদক মনির হোসেন বাপ্পী। পাশে সমিতির আরও কয়েকজন নেতা। এ সময় আচমকা অফিসে ঢুকেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমি ও স্টেট অফিসার রেজাউল করিমসহ অন্যরা। তাদের নেতৃত্বে সিটি করপোরেনের একদল নিরাপত্তা রক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীও ছিলেন। দলটি অফিসে ঢুকেই তর্কাতর্কিতে জড়ায় সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। এক পর্যায়ে মনির হোসেনকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন চসিকের স্টেট অফিসার রেজাউল করিম। এই মারধরে গুরুতর আহত হন মনির হোসেন বাপ্পী।
বিষয়টা নিয়ে শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছেন দোকান মালিক সমিতি। সমিতির সহসভাপতি মো. ইব্রাহিম ভুইঁয়া দৈনিক কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হামলার ঘটনার অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর ব্যংকক মার্কেটের ৩৭১ নম্বর দোকানটির মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রকৌশলী আবদুল মালেক। তিনি হচ্ছেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তার কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমির শ্বশুর। দোকানটি মনির ও জাকির হোসেন নামে দুই ভাই ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় কিছুটা টানাপোড়েনের কারণে তারা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। তাদের ১১ লাখ টাকা জামানত ছিল দোকান মালিকের কাছে। ভাড়াটিয়া ও মালিকের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিয়ম অনুযায়ী সমিতি তা সমাধান করে দেয়। এ ক্ষেত্রেও সমিতি তা করতে গেলে দোকান মালিক তার প্রভাব দেখান সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে। এক পর্যায়ে দলবল নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমি ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়রের নির্দেশে একটা বন্ধ দোকান উচ্ছেদ করতে আমরা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ওই মার্কেটে যাই। এক পর্যায়ে দোকান মালিক সমিতির একজন আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে উচ্ছেদ দলে থাকা কর্মীরা তার উপর চড়াও হয়।
ভিড়িও ফুটেজে মারধরের দৃশ্য দেখার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমি সমিতির ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। কয়েকদিন আগে উল্লিখিত দোকানের মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আবদুল মালেকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা সেখানে উচ্ছেদ অভিযানে যাই। সাবেক ওই কর্মকর্তা তার শ্বশুর কিনা জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন।
চসিকের কর্তাদের উপর্যুপুরি মারধরের শিকার ভুক্তভোগী মনির হোসেন বাপ্পী কালবেলাকে বলেন, আমি সমিতির প্রচার সম্পাদক ও মার্কেটের ৩য় তলার দায়িত্বপ্রাপ্ত। ৩য় তলার ৩৭১ নম্বর দোকানটি নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা চলছিল। সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমি সমস্যা সমাধানের অংশ হিসেবে নিয়ম মাফিক আলোচনা করছিলাম সমিতির অফিসে। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা সমিতির কোনো কথা না শুনে আমার উপর হামলা করে ব্যাপক মারধর শুরু করেন। এ সময় আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে তারা। এতে সমিতির অফিস সহকারী মাহমুদুল হক জামশেদকেও তারা বেধড়ক মারধর করে। এ সময় পুলিশও উপস্থিত ছিল। এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।
দোকান মালিক সমিতির আরেক সহসভাপতি দস্তগীর আজাদ বলেন, মনির হোসেন বাপ্পী আমাদের মার্কেটের ৩৩৩ জন ব্যবসায়ীর নির্বাচিত প্রতিনিধি। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা তাকে এভাবে বেধড়ক মারধর করতে পারেন না। এ নিয়ে আমরা মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। তিনি সোমবার বৈঠকের কথাও বলেছেন। তবে কোনো ধরনের সুরাহা না হলে আইনগত প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে।
মন্তব্য করুন