যশোরে গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষসহ ১২ শিক্ষক-কর্মচারীর ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষায় নকল ইস্যুতে চিরকুট লিখে কলেজছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তে যান। একপর্যায়ে তাদের সামনেই স্থানীয় একদল নারী-পুরুষ হামলা চালায়।
বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা চলছিল। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে কলেজে আসেন। তারা অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকতেই বাইরে থেকে একদল নারী-পুরুষ কলেজ চত্বরে ঢুকে পড়েন। বাইরের লোকজনের সঙ্গে কলেজের বর্তমান-পুরোনো কিছু শিক্ষার্থী ছিল। হামলাকারীরা লাঠিসোঁটা, পচা ডিম, টমেটো ও জুতা নিয়ে সরাসরি অধ্যক্ষের কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করে। তখন শিক্ষক-কর্মচারীরা অধ্যক্ষের কক্ষের প্রবেশপথে বেষ্টনী দেয়।
এ সময় বাধা পেয়ে ১২ শিক্ষক-কর্মচারীকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। পরে তারা শিক্ষকদের লক্ষ্য করে তারা ডিম, টমেটো ও জুতা ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করে। এ সময় অন্তত ১২ জন মারধরের শিকার হয়েছেন। আহতরা সবাই প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নেহালপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আব্দুল হান্নান বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি।
অধ্যক্ষ রেজাউল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার দাবি তুলেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করলে আরও খারাপ অবস্থা হত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক প্রকার বলা যায়, পুলিশের সহযোগিতা নিয়েই আমরা দু’জন অফিসার ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মাহাফুজুল হোসেন বলেন, গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে আঞ্চলিক উপপরিচালকের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়েছিলাম। সেখানে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা চলা অবস্থায় বহিরাগত কিছু লোক এসেছিল। আমরা কক্ষের ভেতরে ছিলাম। আত্মহত্যার শিকার ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। ঘটনা তদন্তে অন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মার্চ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজির ২য় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন শিক্ষার্থী সাবিনা নকল করলে কক্ষ পরিদর্শক তার খাতা নিয়ে পরীক্ষা থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থী সাবিনা বাড়িতে এসে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করে। শিক্ষার্থী সাবিনা খাতুন উপজেলার পাড়িয়ালী গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে। এ ঘটনায় তদন্তের জন্য উপ-পরিচালক খুলনাঞ্চল থেকে যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার মাহাফুজুল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়। বুধবার জেলা শিক্ষা অফিসার মাহাফুজুল হোসেন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার সরেজমিন গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে যান।
মন্তব্য করুন