বগুড়ার নন্দীগ্রামে দুইশ টাকা চুরির অপবাদে দুই কিশোরকে প্রকাশ্যে বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গাছে বেঁধে কয়েক দফায় নির্যাতনের একাধিক ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) নন্দীগ্রাম পৌরসভার নামুইট তিনমাথা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার দুই কিশোরের একজন উপজেলার তাঁরাটিয়া এলাকার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে মুর্শিদুল। অন্যজন ভাটরা গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে সুমন।
রোববার (৩১ মার্চ) রাতে সুমনের বাবা মিজানুর রহমান বাদি হয়ে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নন্দীগ্রাম পৌরসভার নামুইট গ্রামের মাতব্বর নজরুল ইসলাম ও কাচু প্রামাণিক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নামুইট তিনমাথা বাজারে ওয়াক্ত নতুন জামে মসজিদের দানবাক্স থেকে টাকা চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যান নজরুল ও কাচু। পরে গ্রামের কয়েকজন মোড়ল একত্রিত হয়ে ওই দুই কিশোরকে রশি দিয়ে গাছে বেঁধে সালিশ বসায়। এ সময় কিশোরদ্বয়কে বেধড়ক মারধর করা হয়। এমনকি গ্রাম্য মোড়লদের হাতে-পায়ে ধরেও রক্ষা পায়নি তারা।
আরও জানা যায়, এতিম মুর্শিদুলকে নির্যাতনের সময় তার হতদরিদ্র মা মোড়লদের কাছে আকুতি মিনতি করেও সন্তানকে রক্ষা করতে পারেননি।
এদিকে, মারধরে আহত হলেও দুই কিশোরকে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে সড়কের মোড়ে নির্যাতনের সময় শতশত মানুষ ভিড় করেন। এ সময় অবশ্য কয়েকজন পথচারী মারধর না করার অনুরোধ করলেও মোড়লদের আচরণ ছিল বেপরোয়া।
নির্যাতনের শিকার সুমন জানান, তারা বাবা-ছেলে অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। যদিও ঘটনার দিন সকালে দুই বন্ধু অটোভ্যান নিয়ে নন্দীগ্রাম শহরের দিকে যাচ্ছিলো। নামুইট মোড়ে ভ্যান থামানোর সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে চোর চোর চিৎকার করেন নজরুল। এ সময় কয়েকজন এসে যাচাই না করেই তাদের মারতে শুরু করেন এবং প্রায় ঘণ্টাখানেক চলে এ মারধর। প্রমাণ ছাড়া মারধরের বিষয়ে উপস্থিত কয়েকজন প্রশ্ন তোলায় পরে তাদের মসজিদের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও প্রায় আধাঘণ্টা নির্যাতনের পর দুই কিশোরকে নামুইট তিনমাথা মোড়ে এনে কড়ইগাছে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে।
এ ব্যাপারে অবশ্য গ্রাম্য মাতব্বররা দাবি করেছেন, ফজর নামাজ শেষে মসজিদ থেকে মুসল্লিরা চলে যাওয়ার পর দুই কিশোর দানবাক্স থেকে টাকা চুরি করে। তাদেরকে আটক করে শাসন করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
নন্দীগ্রাম থানার ওসি আজমগীর হোসাইন বলেন, চুরির অপবাদে গাছে বেঁধে হেনস্তা ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। ভিডিওসহ তথ্য পেয়েই অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
মন্তব্য করুন