বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা উবায়াদুল হকের বিরুদ্ধে। জানা যায়, বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ ব্যবসা, একই প্রকল্পের নামে একাধিক বরাদ্দ দেওয়া, কোনো কাজ না করে প্রকল্পের টাকা উঠিয়ে নেওয়াসহ প্রতিটি প্রকল্প থেকে ২০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
উপজেলার খলিসখালী ইউনিয়নের বাগডাঙ্গায় রাস্তা ইটের সোলিংকরণ প্রকল্পে টিআর (বিশেষ) প্রকল্পে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই একই রাস্তায় কাবিটা (বিশেষ) প্রকল্পে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টিআর প্রকল্পের ২ লাখ টাকার কাজ হলেও কাবিটা প্রকল্পের সভাপতিকে দুই কিস্তিতে ৬ হাজার টাকা দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা পিআইও উবায়দুল হক উঠিয়ে নিয়েছেন।
প্রকল্পের সভাপতি খলিসখালী ইউপি সদস্য চায়না সরকার কালবেলাকে জানান, আমার নামে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে আমি জানি না। এমনকি কোথায় কাজ করা হয়েছে, কী কাজ করা হয়েছে, তাও জানি না। তালা উপজেলা পিআইও অফিস থেকে আমার স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। আমাকে তখন এক হাজার টাকা দিলে আমি আপত্তি করি। এ সময় আমাকে আরও ৪ হাজার টাকা দেয়। এর বেশিকিছু আমার জানা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খলিলনগর ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য জানান, টিআর (সাধারণ) প্রকল্পে যথাযথ কাজ করলেও প্রকল্প অফিসের অফিস সহকারী সোহেল ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেই ঘুষের টাকা না দেওয়ায় এখনো তার বিল পরিশোধ করা হয়নি। অফিস সহকারী সোহেলের মাধ্যমে পিআইও এ ঘুঘের টাকা আদায় করেন বলে তিনি জানান।
কুমিরা ইউপির আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিআইও অফিসের ফাইল রেডি করতে নেয় ২ হাজার টাকা, রাস্তা পরিদর্শন করতে আসলে খরচ হয় ৩-৪ হাজার টাকা। আবার বিল নিতে গেলে দিতে হয় প্রতি লাখে ২০ হাজার টাকা। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আমরা কাজ করব কীভাবে?
প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা যায়, বিগত সংসদ সদস্যের সময় ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাটকেলঘাটায় বজ্রপাত নিরোধক স্টান্ড ক্রয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বজ্রপাত নিরোধক অবকাঠামো নির্মাণ ২ লাখ ৫০ হাজার, নির্মাণ ব্যয় ১ লাখ টাকা খরচ করলেও এই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান এলাকাবাসী কখনো দেখেননি। কাজ না করে সব টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা।
সাংবাদিকরা জানতে চাইলে প্রকল্প কর্মকর্তা উবায়াদুল হক জানান, এটা এমপি সাহেবের প্রকল্প, এ বিষয়ে কোনো কথা বলা যাবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা বিভিন্ন ঠিকাদারের সাথে যৌথ ব্যবসা করেন। তালা উপজেলার ২-৩ জন ঠিকাদারের সাথে তিনি এই ব্যবসা পরিচালনা করেন। কখনো কখনো দূরের কোনো ঠিকাদার কাজ পেলে তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা নিজেই অন্যদের সাথে নিয়ে সম্পন্ন করেন।
প্রকল্প কর্মকর্তা অফিসের অফিস সহকারী সোহেল জানান, সাংবাদিকদের সামলাতে, অডিট ঠেকাতে ও অনেক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে আমাদের টাকা নিতে হয়। আপনি নিউজ করবেন কেন? স্যারের সাথে দেখা করলে তো সব সমাধান হয়ে যায়।
জেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ বলেন, কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনের পরামর্শ দেন তিনি।
তালা ইউএনও আফিয়া শারমীনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ পাঠালেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
মন্তব্য করুন