দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কান্তনগর গ্রামে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জমিতে মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মুসলিমরা বলছেন, মামলা এবং আপসনামা মূলে এই জমির মালিক কান্তনগর গ্রাম জামে মসজিদ।
অপরদিকে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রনজিৎ কুমার সিংহ দেবোত্তর এস্টেটের নিজস্ব জমিতে অবৈধভাবে মসজিদ নির্মাণ বন্ধের জন্য আবেদন করেছেন।
গত ১৩ মার্চ রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রনজিৎ কুমার সিংহ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, কাহারোল উপজেলার কান্তনগর মৌজায় সিএস ২নং খতিয়ানটি শ্রী শ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ সেবাইত অনারেবল মহাজার জগদিশ নাথ রায় নামে প্রচারিত। ওই খতিয়ানে ৯৪ দশমিক ৭ একর ও এস এ ৫ নং খতিয়ানে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের পক্ষে জিম্মাদার জেলা প্রশাসক ১৯টি দাগে ৬২ দশমিক ৪৬ একর জমি রয়েছে। যা ১৪৩০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত খাজনা হালনাগাদ রয়েছে। গত ১০ মার্চ তিনি জানতে পারেন, কান্তনগর মৌজার ৫ ও ১৬নং দাগের রাজ দেবোত্তর এস্টেটের সম্পত্তির ওপর একটি পাকা মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে। এটা শুনে গত ১১ মার্চ তিনি নির্মাণাধীন মসজিদের জায়গাটি পরিদর্শন করেন। সেখানে উপস্থিত মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মোজাম্মেল হককে তিনি জিজ্ঞেস করেন কীভাবে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করছেন।
তিনি জানান, ১৯৭৬ সালে দিনাজপুরের ডিসি উক্ত জমি তাদেরকে দিয়েছেন। তার নিকট দলিল দেখতে চাইলে তিনি একটি হাতে লেখা তিন পৃষ্ঠার আপসনামার ফটোকপি প্রদান করেন। কপিটি রেজিস্ট্রিকৃত দলিল নয় আর সেখানে মালিকানা হস্তান্তরের কোনো কথা উল্লেখ নেই। আপসনামাটি ভুয়া ও বানোয়াট মনে হয়। তা ছাড়া ১৯৯৯ সালের ৫১ ডিএলআর দেবোত্তর আইনে বলা হয়েছে, দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়, উহা সকল সময়ের জন্য দেবোত্তর সম্পত্তি। রাজ দেবোত্তর এস্টেটের সম্পত্তিতে অবৈধভাবে মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু করায় এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাই অবিলম্বে কাজ বন্ধ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছি।
এই আবেদন পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক কাহারোল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কাজ বন্ধসহ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুস সালামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এখানে আগে থেকেই সেমি কাঁচা মসজিদ ছিল। এখন ২৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলে তিন তলার ভিত্তি দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ১ মার্চ মসজিদের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাকারিয়া জাকা। এই জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। সে সময় মামলার আদেশে উভয় পক্ষকে আপসের জন্য বলা হয়। সেই সূত্রে ১৯৭৬ সালের ১৩ জুন একটি আপসনামা মূল্যে এই ৮ শতক জমির মালিক মসজিদ। দিনাজপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রতন সিং বলেন, রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করার পর সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা এর সঠিক তদন্ত চাই।
কাহারোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার জন্য মসজিদ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছি।
মন্তব্য করুন