সময়টা ১৯৭৪ সাল। রমজানে সেহেরির সময় ডেকে তুলতে মাইক নিয়ে বের হয়ে পড়েন কিশোর আকবর আলী। শহরের অলি-গলি ঘুরে মুসলমানদের সেহরি খাওয়ার জন্য মাইকিং শুরু করে। পরের দিন সবাই আকবরের প্রশংসা করেন। এরপর থেকে রমজান মাসে সেহেরির সময় নিয়মিত মাইকিং শুরু করেন তিনি। এ বছর রমজানে সেহরির সময় মাইকিংয়ের মধ্য দিয়ে ৫১ বছরে পাড়ি দিলেন আকবর আলী।
আকবর আলীর বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের পূর্ব দাপুনিয়া মহল্লায়। ১৯৭৪ সালে পৌর শহরে আকবর মাইক সার্ভিস নামে ব্যবসা চালু করেন তিনি।
আকবর আলীর বয়স এখন ৬৬ বছর। রমজানে সেহেরির সময় মাইক নিয়ে বের হয়ে পড়েন তিনি। গৌরীপুর পৌর শহরের অলি-গলি ঘুরে মাইকিং করেন। তার এই কাজে একমাত্র সঙ্গী রিকশাচালক আব্দুর রশিদ। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা অসুস্থতাও দমিয়ে রাখতে পারেননি তাকে। গত ৫১ বছর ধরে সকলের কাছে এক পরিচিত কণ্ঠস্বর এই ডাক।
কোনো প্রকার সম্মানী ছাড়াই সেহরির সময় ডেকে তুলেন তিনি। এরপর ৮০ দশকে তৎকালীন পৌরসভার কমিশনার সৈয়দ আবু সাঈদ এই কাজের জন্য আকবর আলীর সম্মানীর ব্যবস্থা করেন।
আকবর আলী বলেন, ‘সম্মানীর জন্য এ কাজ করি না। নিজের ভালো লাগা, সৃষ্টিকর্তার সন্তষ্টি ও সওয়াবের জন্যই এই কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সাল থেকে রমজানের সেহরির সময় মাইকিং শুরু করি। গত ৫১ বছর ধরে সেহরির সময় কোনোদিন আমি মাইকিং বাদ দেইনি। আল্লাহর রহমতে অসুস্থতা কিংবা বৈরী আবহাওয়া কোনো কিছুই আমাকে বিরত রাখতে পারেনি। যতদিন বেঁচে আছি কাজটি যেন করতে পারি এটাই প্রার্থনা।’
গৌরীপুর পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘শৈববকাল থেকেই সেহরির সময় ওনার মাইকিং শোনে সেহরি খেতে উঠতাম। প্রতিবেশিরা মাইকিং শোনেই সেহরির সময় রান্না করত। এখন ডিজিটাল যুগে ঘরে ঘরে ঘড়ি, হাতে মোবাইল, অ্যালার্মের ব্যবস্থা থাকলেও আকবর ভাইয়ের মাইকিংটার গুরুত্ব কমেনি।’
পৌর শহরের চকপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মিলন খান বলেন, ‘আকবর ভাই রমজান মাসে রাত জেগে প্রতিদিন সেহরির সময় মাইকিং করে মুসলমানদের ডেকে তোলেন। দীর্ঘ ৫১ বছর ধরে তিনি এই কাজটা করে যাচ্ছেন। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।’
গৌরীপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সেহরির সময় পৌর শহরের মুসলমানদের ডেকে তোলার জন্য আকবর চাচা মাইকিং করেন। এই বছর সেহরির মাইকিংয়ের মধ্য দিয়ে আকবর চাচার ৫১ বছর হলো। এটা একটা মাইলফলক। প্রশংসনীয় এই কাজের জন্য মেয়র মহোদয়ের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
মন্তব্য করুন