ঢাকার সাভার উপজেলার অন্তর্গত ইয়ারপুর ইউনিয়নে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) মূল বন্যাপ্রবাহ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ইছরকান্দি, মনোসন্তোষ ও সাতাইশকান্দি মৌজায় উত্তরণ প্রোপার্টিজ লিমিটেড ও অ্যাচিভ করপোরেশন নামক আবাসন কোম্পানির অননুমোদিত আবাসন প্রকল্পের জন্য মাটি ভরাট, প্লট বিক্রয়সহ সব কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মহামান্য আদালত।
একইসঙ্গে আদালত প্রদত্ত উল্লিখিত নির্দেশ প্রতিপালন সংবলিত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে সোমবার (১৮ মার্চ) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশের পাশাপাশি মহামান্য আদালত উত্তরণ প্রোপার্টিজ লিমিটেড এবং অ্যাচিভ করপোরেশন নামক আবাসন কোম্পানি কর্তৃক মাটি ভরাট থেকে ইয়ারপুর ইউনিয়নের ইছরকান্দি, মনোসন্তোষ ও সাতাইশকান্দি মৌজায় অবস্থিত মূল বন্যাপ্রবাহ এলাকা (স্থানীয়ভাবে ‘গজাইরার বিল’ নামে পরিচিতি) রক্ষায় বিবাদীগণের ব্যর্থতা সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থি হওয়ায় কেন তা অবৈধ, আইনবহির্ভূত ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের ওপর রুল জারি করেছেন। মহামান্য আদালত এ রুলে আইন, বিধি ও পরিকল্পনা অনুযায়ী উল্লিখিত মূল বন্যাপ্রবাহ এলাকা পুনরুদ্ধার ও রক্ষার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও বিবাদীগণের কাছে জানতে চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা জেলাধীন সাভার উপজেলাস্থ ইয়ারপুর ইউনিয়নের ইছরকান্দি, মনোসন্তোষ ও সাতাইশকান্দি মৌজায় প্রায় ৬০০ একর আয়তনের একটি বিল রয়েছে যা স্থানীয়ভাবে ‘গজাইরার’ বিল নামে পরিচিত। বিলটির দৈর্ঘ প্রায় ১০ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৪ কিলোমিটার। এলাকাটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাব) মূল বন্যাপ্রবাহ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে।
বিলটি বর্ষাকালে পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে দৃশ্যত বিশাল এক সাগরে রূপ নেয়। এখনও এ বিলে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। মৎস্য উৎপাদনের পাশপাশি শীতকালে ফসল ও সবজি চাষ হয় এ বিলে। বিলটির ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১৪টি গ্রামের কৃষক ও মৎস্যজীবী।
বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ বিল বর্তমানে নানামুখী হুমকির সম্মুখীন। নির্বিচারে এ বিলের জলাশয় ও কৃষি উপযোগী নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। ইতোমধ্যে উত্তরণ প্রোপার্টিজ লিমিটেড নামক আবাসন কোম্পানি বিলের ইছরকান্দি, মনোসন্তোষ ও সাতাইশকান্দি মৌজায় প্রায় ২৫০ বিঘা এবং অ্যাচিভ করপোরেশন বিলের সাতাইশকান্দি মৌজায় প্রায় ২২০ বিঘা উর্বর জমিতে কোম্পানির সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে যার কোনোটিরই নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমোদন। জলাশয় রক্ষায় বিদ্যমান আইনের বিধান লঙ্ঘন করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া উত্তরণ প্রোপার্টিজ লিমিটেড ও অ্যাচিভ করপোরেশন নামক আবাসন কোম্পানি কর্তৃক জলাশয় ভরাট বন্ধে ও বিলটি সংরক্ষণে বেলা উল্লিখিত মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীরা হলেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক, ঢাকার পুলিশ সুপার, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা জেলার উপপরিচালক, সাভার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উত্তরণ প্রোপার্টিজ লিমিটেড এবং অ্যাচিভ করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী, বার-এট-ল’ এবং তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট এস হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
মন্তব্য করুন