রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের পাশ থেকেই বালু তুলে বিক্রি করছে একটি চক্র। স্থানীয়দের শঙ্কা, এতে বর্ষায় নদীভাঙন বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুণ।
জানা যায়, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দিন রাতে বালু তুলে বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রটি। তবে দিন থেকে রাতের বেলা বালু তোলার গতি বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন পদ্মার তীর থেকে এভাবে কয়েক লাখ টাকার বালু লুট করছে চক্রটি। অব্যাহতভাবে বেশ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার ফলে নদী তীরে সৃষ্টি হয়েছে অনেক বড় বড় গর্তের। ফলে বর্ষায় এই এলাকায় নদীভাঙন বৃদ্ধি পাবে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অথচ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০-এর ৫ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্যকোনো মাধ্যমে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু এ আইনকে বৃদ্ধাঙুলী দেখিয়ে দৌলতদিয়া ৭নং ফেরি ঘাট থেকে মাত্র ৫শ গজ দূরে বাহিরচর দৌলতদিয়া ছাত্তার মেম্বার পাড়ায় পদ্মা নদীর পাড়ে এক্সকাভেটর দিয়ে নদীপাড়ের জমি খনন করে বালু তোলা হচ্ছে। এই বালু তোলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী বেলায়েত মণ্ডল।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাহিরচর দৌলতদিয়া ছাত্তার মেম্বার পাড়ায় পদ্মা নদীর পাড়ের জমি থেকে এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এই বালু নিতে বেশ কয়েকটি ডাম্প ট্রাক অপেক্ষা করছে। বালু ভর্তি ডাম্প ট্রাক চালাচলের জন্য পদ্মা নদীর পাড় থেকে শুরু করে ৭ নম্বর ফেরি ঘাট পর্যন্ত করা হয়েছে বিশেষ রাস্তা। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অন্তত ১০টি ট্রাক বালু ভর্তি করে ছুটে যায়। এসব বালু উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এবং উপজেলার বাইরেও বিক্রি করা হয়। নদীপাড়সহ আশপাশের কৃষি জমি থেকেও গভীর গর্ত করে বালু তোলা হয়েছে। বালু কাটায় নেতৃত্বদানকারী বেলায়েত মণ্ডলের জমি বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে এক ড্রাম ট্রাক চালক বলেন, ‘এখানকার জমির মালিক বিলা মণ্ডল বালু বিক্রি করছেন। তাতে কার কী সমস্যা। এসময় ভেকুচালক বলেন, ‘রাত দিন দিয়ে ১০/১৫ গাড়ি মাটি বিক্রি করা হয়। এসময় তাকে গত এক ঘণ্টায় ১০/১৫টি ট্রাক বালু বোঝাই করে চলে যাওয়ার কথা বললে তিনি চুপ করে থাকেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ এই বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের ভূমিকা বড়াবড়ই প্রশ্নবিদ্ধ। আর স্থানীয়রা কিছু বলতে গেলে তাদের দেখানো হয় নানা ধরনের ভয়-ভীতি। খোলা ট্রাকে বালু পরিবহন করায় ধুলায় বাড়ি ঘরে থাকা দায় বলে জানান অনেকেই। নদীর পার থেকে বালু উত্তোলন দ্রুত বন্ধের দাবি পদ্মা পারের মানুষের।
স্থানীয় মুরাদ হোসেন জানান, প্রশাসনের লোকজন মাঝে মধ্যেই এসে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। আবার রহস্যজনক কারণে ফের শুরু হয় বালু উত্তোলন।
আল আমিন নামের এক ট্রাকচালক বলেন, প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ ট্রাক বালু বিক্রি করা হয়। মাঝে মধ্যে প্রশাসন থেকে অভিযান চালিয়ে বালু তোলা বন্ধ করে। কিন্তু কয়েক দিন পর আবার বালু তোলা শুরু হয়।
অভিযুক্ত বেলায়েত মণ্ডল জানান, নদীর পাড় থেকে বালু কাটার জন্য প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেই। জমির মালিকদের টাকা দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলনের পক্ষে কিছু কাগজ-পত্র প্রদর্শন করেছিলেন। তবে সেসব কাগজ-পত্রের তেমন কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তাই বালু উত্তোলন বন্ধে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। তারপরও রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করছে বলে জানতে পেরেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন