ঢাকার অদূরে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের মেইটকা গ্রামে চাইনিজ সবজি চাষে ভাগ্য বদলেছে পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র কুব্বাদ হোসেন অভিসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজনের। কোনোরকম উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়াই চাইনিজ সবজি চাষে সফলতা পেয়ে খুশি এসব তরুণ কৃষকরা। তাদের উৎপাদিত এসব সবজির বার্ষিক মূল্য প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি ক্ষুদ্র পরিসরে রপ্তানি হয় বিদেশেও। আর এতেই এই এলাকা এখন পরিচিতি পেয়েছে চায়না গ্রাম নামে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে বাজার সৃষ্টি হওয়ায় এই সবজি চাষে আগ্রহ পাচ্ছেন কৃষকরা। আর তাই বিষমুক্ত সবজি সংগ্রহ করে তা ভোক্তার কাছে সহজেই সতেজভাবে পৌঁছে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে চায়নিজ খাবারের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়তে থাকে এসব সবজির। তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ও বাজারে চাহিদা অনুযায়ী কৃষকরা নিজে করছেন এই সবজি চাষ ও অন্যকে দিয়ে যাচ্ছেন উৎসাহ।
সাভারের তেঁতুলঝোড়ার দক্ষিণ মেইটকা ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আদি পেশা কৃষিকে ধরে রেখেছিল ধান চাষের মাধ্যমে। কিন্তু কালের বিবর্তনে তারা অল্প সময়ে ফসল আসার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় সবজি চাষকে। ক্রমান্বয়ে তা বিভিন্ন চায়না সবজি চাষের দিকে মোড় নেয়। আর যার হাত ধরে এসব সবজির চাষাবাদ শুরু হয় তিনি কোব্বাত হোসাইন অভি, ২০০৪ সালে মাত্র পাঁচ বিঘা জমিতে বেবীকর্ণ নামে এক প্রকার চাইনিজ সবজি ও দেশীয় সবজি আবাদের মাধ্যমে চাষাবাদ শুরু করলেও বর্তমানে ২০০ বিঘার উপরে জমিতে ব্রোকলি, রেড ক্যাবেজ, ক্যাপসিক্যাম, লেটুস, স্যালোরি, থাই জিনজার, পার্সলি, বিটরুট, সুইটকন, বেবিকর্নসহ রং-বেরঙের প্রায় ২৬ প্রজাতির চাইনিজ সবজির চাষাবাদ করছেন। ফলে একদিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অভি, অন্যদিকে তার প্রতিষ্ঠিত কৃষক বাংলা এগ্রো প্রোডাক্ট নামের প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় শখানেক শ্রমিকের।
বয়সে তরুণ ও শিক্ষিত এই কৃষক একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন অন্যদিকে স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড অ্যাওয়ার্ড, দীপ্ত কৃষি অ্যাওয়ার্ড সহ সরকারি ও বেসরকারি একাধিক পুরস্কার। তরুণ এই উদ্যোক্তা মনে করছেন এসব সবজি যদি বড় পরিসরে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে বছরে এ খাত থেকে কয়েক কুটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
এ ব্যাপারে কুব্বাদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমার বাবা একজন ভেটেনারি চিকিৎসক ছিলেন এর পাশাপাশি তিনি বাড়িতে গরুর খামার করেছিলেন সেই খামারের গরুর খাবারের জন্য বোনা ভুট্টা ক্ষেতে পাওয়া ছোট ভুট্টাগুলো (বেবিকর্ন) একদিন বিক্রির জন্য রাজধানীর গুলশান কাঁচা বাজারে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আরও অনেক প্রকার বিদেশি সবজির সাথে পরিচিত হই। সেই থেকেই এসব বিদেশি সবজি চাষের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মায়। এসব সবজি আমাদের দেশীয় সবজির চেয়ে অধিক মূল্যে বিক্রি করে আমারা দিগুন মুনাফার মুখ দেখি। তবে আমাদের এখানে পর্যাপ্ত গ্রিন হাউস, পলিশেড হাউস, ন্যাটহাউস সংরক্ষণের জন্য বড় পরিসরে কোল্ড স্টোরেজের অভাবে সবজি চাষ ও বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।
এদিকে কোব্বাদ হোসাইন অভির দেখাদেখি দক্ষিণ মেইটকাসহ ঐ এলাকার আশপাশের একাধিক গ্রামের তরুণ ও শিক্ষিত বেকাররা বিদেশি এসব সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। উচ্চমূল্যের এ ফসলগুলোতে বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ হাজার টাকা হলেও বিক্রি করেন উৎপাদন খরচের প্রায় দ্বিগুণ দামে।
সাভার উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোছা. ঈশরাত জাহান বলেন, আমরা সম্ভাবনাময় এই খাতটির প্রসারে সর্বাত্মক সহযোগিতার পাশাপাশি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আধুনিক কৃষির সকল সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে এসব মূল্যবান সবজি চাষ করে স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এসব সবজি রপ্তানি করা সম্ভব। আর এতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে লাখো বেকারের।
মন্তব্য করুন