গত ২৬ নভেম্বর খালাত বোনের সঙ্গে বিয়ের কাবিন হয় নাবিক সাজ্জাদের। বিয়ের পরদিনই চলে যান জাহাজে, যোগ দেন কাজে। ফিরে এসেই বিয়ের পিঁড়িতে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উভয়ের পরিবার। বিয়ের নানা আয়োজনের প্রস্ততিও চলছে তাদের। এরই মধ্যে ঘটে গেল অঘটন। উভয় পরিবারে যেন নেমে আসে অন্ধকার মেঘ।
গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় এমডি আবদুল্লাহ্ জাহাজের নাবিক সাজ্জাদ হোসেন (২৮) পরিবারকে মোবাইল ফোনে জানান তাদের জাহাজ জলদস্যুর কবলে পড়েছে। ‘জলদস্যুরা আমাদের জাহাজ ঘিরে ফেলেছে। গোলাগুলিও করছে। দোয়া করিও’ -এ কথা বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।
সাজ্জাদ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. তাজু মিয়ার ছেলে। পরিবারে পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সাজ্জাদ তৃতীয়।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকেলে সাজ্জাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারে চলছে কান্নার রোল। তার মা বারবার ছেলের কথা বলে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। বাবা মসজিদে বসে ছেলের জন্য দোয়া করছেন। স্বজনরা আছেন দুশ্চিন্তায়। ঘরের সামনে বসে সাজ্জাদের বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার সময়ও কিছুক্ষণ পরপর মায়ের কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।
সাজ্জাদের বড় ভাই মোস্তাক মিয়া বলেন, ২৬ নভেম্ভর সাজ্জাদের বিয়ের কাবিন হয়। ২৭ নভেম্ভর সাজ্জাদসহ শামসুদ্দিন শিমুল ও আসিফুর রহমান তিনজন এক সঙ্গে বের হয় জাহাজের উদ্দেশে।
তিনি আরো বলেন, সাজ্জাদ জলদস্যুদের কবলে পড়ার পরই ফোন করলে তার ভাবী ফোন রিসিভ করেন। কিছুক্ষণ পর একটি অডিও রেকর্ড পাঠায় সে। মাত্র ৯ সেকেন্ডের ওই অডিওতে সে বলেছে, আমাদের মোবাইল জলদস্যুরা নিয়ে ফেলছে। আর কথা হবে না। এখন আমাদের জাহাজ সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর সাজ্জাদের সঙ্গে আমরা আর যোগাযোগ করতে পারিনি।
তিনি বলেন ঘটনার পর এসআর শিপিং কোম্পানির কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইফতেকার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি নাবিকদের উদ্ধার করে আনার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা অপেক্ষায় আছি।
সাজ্জাদের মা সমশাদ অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। ছেলের সঙ্গে ভালোভাবে কথাও বলতে পারলাম না। সে শুধু দোয়া করতে বলেছে। সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন, আমার ছেলেসহ জিম্মি হওয়া সবেইকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।
মন্তব্য করুন